ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জামের বীজ ব্যবহারের পরামর্শ দেন। কেন জামের বীজ ডায়াবেটিসে এত উপকারী? ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে জামের বীজের ব্যবহার কিভাবে করবেন? জানতে পড়তে থাকুন-
আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞ রাম এন কুমারের মতে,”জামের বীজ অধিকাংশ আয়ুর্বেদিক ডায়াবেটিসের ওষুধ তৈরিতে ব্যবহার হয়।” জামের সংস্কৃত নাম জাম্বু, এবং বিভিন্ন আদি আয়ুর্বেদশাস্ত্রে এর উল্লেখ আছে। ভারতের আর এক নাম জাম্বুদ্বীপ বা অনেক জাম্বু (জাম) বা ভারতীয় ব্ল্যাকবেরি গাছের দেশ। আয়ুর্বেদ মতে জাম হল অ্যাসট্রিনজেন্ট অ্যান্টি-ডিউরেটিক, যা ঘন ঘন মূত্রত্যাগ কমাতে সাহায্য করে, হাইপোগ্লাইসেমিক গুণ আছে যা রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে পূর্ণ যা ডায়াবেটিসে উপকারী। জাম ফল ও বীজ উভয়েই এই গুণগুলি উপস্থিত।
এশিয়া প্যাসিফিক জার্নাল অফ ট্রপিক্যাল বায়োমেডিসিনে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুযায়ী জামের বীজ হাইপারগ্লাইসেমিক ইঁদুরের শরীরে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে ও ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে খুবই উপকারী। আরও জানা যায়, জামের বীজের উপকারী প্রোফাইল্যাকটিক ক্ষমতা হাইপারগ্লাইসেমিয়া প্রতিরোধে সাহায্য করে। ফলে রোগীদের রোজের খাদ্যতালিকায় জামের বীজ রাখা দরকার।
ম্যাক্রোবায়োটিক পুষ্টিবিদ ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ শিল্পা অরোরা জানাচ্ছেন,”ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে জামের বীজ খুবই উপকারী। ফল ও বীজ উভয়েই উপস্থিত জাম্বোলাইন ও জাম্বোসাইন নামক পদার্থ রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। জামের বীজও রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। জাম খাওয়া উপকারী। বীজগুলো শুকিয়ে গুঁড়ো করে প্রত্যেকদিন খালি পেটে খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে।”
যাদের ডায়বেটিস হয়েছে তাদের জন্য জাম খুব ভালো। এতে অ্যান্টি ডায়েবেটিক প্রপার্টি আছে যা রক্তে চিনির মাত্রা কমায়।
এই ফলের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম হওয়ার ফলে রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রিত থাকে। এছাড়াও অতিরিক্ত তেষ্টা পাওয়া বা বারবার মূত্রত্যাগ যা ডায়বেটিসের লক্ষণ এগুলো ও নিয়ন্ত্রণে রাখে। শুধু ফল নয়‚ এই গাছের পাতা‚ ডাল‚ ফলের বিচি সব কিছু দিয়েই ডায়েবেটিসের ট্রিটমেন্ট করা হয়।
চলুন এনডিটিভি অবলম্বনে জেনে নিই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কিভাবে জামের বিচি ব্যবহার করবেনঃ
১) জাম পরিষ্কার করে একটি পাত্রে রাখুন।
২) আঙুল দিয়ে ফল থেকে বিচি ছাড়িয়ে নিয়ে অন্য একটি শিশিতে রেখে দিন।
৩) বিচিগুলো ভালোভাবে ধুয়ে নিন যাতে গায়ে শাঁস না লেগে থাকে।
৪) পরিষ্কার কাপড়ে বিচিগুলো ছড়িয়ে রোদে তিন চার দিন শুকাতে দিন।
৫) শুকিয়ে গেলে বাইরের খোসা ছাড়িয়ে ভেতরের সবুজ অংশ বের করুন।
৬) সবুজ অংশটি সহজেই আঙুলের চাপে ভাঙতে পারবেন। সবগুলি ভেঙে আরও কিছুদিন রোদে শুকাতে দিন।
৭) এবার শুকনো বিচিগুলো ভালো করে গুঁড়া করে নিন।
৮) ভাল করে গুঁড়া করার পর চালুনিতে চেলে নিন।
৯) তারপর জামের বিচির গুঁড়া একটি বায়ু-নিরোধক শিশিতে রেখে দিন এবং প্রয়োজন মতো ব্যবহার করুন।
১০) এক গ্লাস জলে এক চা-চামচ জামের বিচির গুঁড়া মিশিয়ে রোজ সকালে খালি পেটে পান করুন।
তবে এই পদ্ধতিতে জামের বিচি খাবার আগে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে নেবেন।
সূত্রঃ এনডিটিভি
আরও পড়ুন- রোজ খান ২ টি কাঁচা মরিচ, ৬টি স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমে যাবে