গল্পটি তিনজন ব্যাক্তির সম্পর্কে যারা একটি বাসায় অবস্থান করছে। আমি সম্ভব হলে গান গাইতে গাইতে গল্পটি বলতাম। সব মহিলাদের কানে ফিসফিস করে বলতাম। আমি রাস্তায় বলতে বলতে দৌড়াইতাম। গল্প বলতে বলতে আমার জিভ ছিঁড়ে গিয়ে দাঁতে ঝাঁকুনি দিত।
বাড়ির একটি রুমে তারা তিনজন। একজন অল্পবয়সী ও চটপটে। সে সারাক্ষন হাসাহাসি করে।
দ্বিতীয় ব্যাক্তির লম্বা সাদা দাড়ি আছে। সে সন্দেহের কারনে শান্তিতে থাকতে পারে না। মাঝে মাঝে তার সন্দেহ তাকে ছেড়ে দেয় এবং তখনই সে ঘুমাতে পারে।
তৃতীয় ব্যাক্তির তীক্ষ্ণ চোখ আছে এবং সে ভয়ে ভয়ে হাত ঘষা অবস্থায় রুমে চলাচল করছে। এখন তিনজন ব্যাক্তি অপেক্ষা করছে।
বাড়ির উপরতালায়, জানালার পাশে অর্ধ-অন্ধকারে একজন মহিলা দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাড়িয়ে আছে।
এটিই আমার গল্পের প্রধান দিক এবং পরবর্তীতে আমি যা জানবো, সব এর মধ্যেই রয়েছে।
আমার মনে আছে একজন চতুর্থ ব্যাক্তি বাড়িতে এসেছিল, একজন সাদা নিরব ব্যাক্তি। ওইরাতে সবকিছু রাতের সাগরের মতো নিরব ছিল। সে ঘরের পাথরের মেঝেতে দাড়িয়ে ছিল এবং ওই তিনজন ব্যাক্তি কোনো শব্দ করেনি।
তীক্ষ্ণ চোখওয়ালা লোকটি ফুটন্ত তরলের মতো হয়ে গেল। সে খাঁচাবন্দি পশুর মতো পিছু পিছু দৌড়ে গেল। বৃদ্ধ ধুসর লোকটি ভয়ে তার দাঁড়ি টানতে লাগলো।
সাদা চতুর্থ লোকটি উপরে মহিলার কাছে গেল।
ওইখানেই মহিলাটি ছিল- অপেক্ষায়।
বাড়িটা কেমন নিস্তব্ধ; কত জোরে পাড়ার সব ঘড়ি টিকটিক করছে। মহিলাটি ভালবাসা পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। এইটাই নিশ্চই পুরো গল্প। সে ভালবাসার জন্য ক্ষুধার্ত ছিল। সে ভালবাসা পেতে চাচ্ছিল। যখন নিরব সাদা ব্যাক্তিটি তার কাছে এলো, সেও এগিয়ে গেল। সে ঠোঁট খুলে হাসি দিল।
সাদা লোকটি কিছুই বললো না। তার চোখে কোনো তীব্রতা, কোনো প্রশ্ন ছিল না। তার চোখ তারার মতো নিরপেক্ষ ছিল।
নিচতালায় দুষ্টলোকটি হারিয়ে যাওয়া ক্ষুদার্ত কুকুরের মতো হাহাকার করতে করতে দৌড়াতে লাগলো। ধুসর রঙের ব্যাক্তিটি তাকে অনুসরন করলেও ক্লান্ত হয়ে মেঝেতে শুয়ে পড়লো। সে আর জেগে উঠলো না।
চটপটে ব্যাক্তিও মেঝেতে শুয়ে পড়লো। সে হাসতে হাসতে তার ছোটো গোঁফ নিয়ে খেলতে লাগলো।
আমার গল্পে কি ঘটেছে, তা বলার ভাষা নেই আর। আমি আর বলতে পারব না এই গল্পটা।
সাদা নিরব ব্যাক্তিটি খুব সম্ভবত মৃত্যু।
অপেক্ষায় অধির মহিলাটি সম্ভবত জীবন।
বুড়ো ধুসর দাড়িওয়ালা এবং দুষ্ট দুইজনই আমাকে ধাঁধায় ফেলেছে। অনেক চিন্তার পরও আমি বুঝতে পারছি না। তবে বেশিরভাগ সময়ই আমি তাদের কথা ভাবি না। আমি সেই চটপটে ব্যাক্তির কথা ভাবতে থাকি যে আমার পুরো গল্পেই হাসছিল।
যদি আমি তাকে বুঝতে পারি, তাহলে আমি সবকিছু বুঝতে পারব। আমি পুরো বিশ্ব ঘুরে বেড়াতে পারবো এই বিস্ময়কর গল্প বলার মাধ্যমে। আমি আর বোকা থাকবো না।
কেন আমাকে আর শব্দ দেয়া হলো না? কেন আমি এতো বোকা?
আমার কাছে বলার মতো একটি চমৎকার গল্প আছে, কিন্তু বলার কোনো উপায় জানা নেই।