হাওরাঞ্চলসহ সারাদেশে যে কৃষকরা আগাম ধান কাটছেন তারা ভালো দাম পাচ্ছেন। জমি থেকে কেটে খলায় (ধান মাড়ানো ও শুকোনোর উঠান) এনে মেশিন দিয়ে ধান বের করে সেখান থেকেই প্রতি মণ ধান (ভেজা) ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা দরে বিক্রি করতে পারছেন তারা। আর নতুন ধানই শুকনো হলে ৯০০ থেকে ৯৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দেশের বিভিন্ন এলাকার কৃষকের সঙ্গে আলাপ করে এ তথ্য জানা গেছে। কৃষকরা বলছেন, ধানের এই দাম বজায় থাকলে তারা পুষিয়ে নিতে পারবেন। করোনাভাইরাসের চোখ রাঙানির মধ্যে ধানের ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে সংশয় ছিল, তাও কেটে যাচ্ছে কৃষকদের। এতে খুশি কৃষি কর্মকর্তারাও।
বগুড়া জেলার চরপাড়া গ্রামের ধান ব্যবসায়ী মজিবর রহমান বলেন, জমি থেকে কেটে খলায় এনে মেশিন দিয়ে ধান বের করে সেখান থেকেই প্রতি মণ ধান (ভেজা) ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাড়ির ওপর থেকেই এখন নতুন ধান এই দামে বেচাকেনা হচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এক বিঘা জমিতে উৎপাদন ভালো হলে ২৭-২৮ মণ ভেজা ধান হবে। এক মণ ধান শুকনো করলে ৩০ কেজি হয়। সে হিসাবে ভেজা ধান বিক্রি করেই কৃষক লাভবান হচ্ছেন।
নাটোরের কৃষক আসলাম জানান, উত্তরের এ জেলায় এখনো পুরোদমে ধান কাটা শুরু হয়নি। যারা বি আর-২৮ ধান করেছেন তারাই এখন ধান কাটছেন। এখনো অনেকে বাজারে ধান নেননি। কারণ বাজারগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এখনো জমে ওঠেনি। ধান বেচাকেনা যা হচ্ছে, তা বাড়ির ওপর থেকেই হচ্ছে।
তিনি বলেন, রোববার (০৩ মে) বি আর-২৮ ধান প্রতি মণ বিক্রি করেছি ৭৬০ টাকা দরে। ভেজা ধান হিসেবে দাম বেশ ভালো পেয়েছি। গত মৌসুমে (আমন) শুকনো ধানই বিক্রি করতে হয়েছিল ৬০০ টাকা মণ। সেদিক থেকে হিসাব করলে এবার ধানের দাম ভালো। তবে দাম এর চেয়ে নিচে নেমে গেলে কৃষকরা পোষাতে পারবেন না। এমনিতেই গতবার ধানের দাম না পেয়ে এবার অনেকেই ধানের আবাদ না করে জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন।
উত্তরের আরেক জেলা নওগাঁয় খবর নিয়ে জানা গেছে, সেখানে প্রতি মণ ভেজা ধান ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যদিও সেখানে কেবল ধানকাটা শুরু হচ্ছে। পুরো মৌসুম শুরু হতে এখনো ১০-১২ দিন লাগবে। যারা আগাম কিছু ধান লাগিয়েছেন, তারাই এখন ধান কাটছেন।
হাওর জেলা সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় খবর নিয়ে জানা গেছে, জেলার তাহিরপুর উপজেলায় সর্বোচ্চ দামে ধান বিক্রি হচ্ছে। এখানে প্রতি মণ ধানের দাম ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার পাগনার হাওরের কৃষক আকবর হোসেন জানান, সেখানে প্রতি মণ ধান এখন ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার দেখার হাওরের কৃষক সোহেল তালুকদার জানান, চলতি সপ্তাহে সেখানে প্রতি মণ ধানের দাম ৭৫০ টাকা উঠেছে।
অন্যদিকে ধর্মপাশা উপজেলায় প্রতি মণ ধান ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। জানা গেছে, ৭০০ টাকার নিচে যেগুলো বিক্রি হচ্ছে সেগুলো মোটা ধান।
এ বিষয়ে কৃষি সচিব মো. নাসিরুজ্জামান বলেন, অনেক কৃষক তাৎক্ষণিক টাকার প্রয়োজন মেটাতে ধান কেটে এনে খলা থেকেই বিক্রি করে দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, নেত্রকোনা জেলার খালিয়াজুড়িতে কৃষকরা খলা থেকে ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা মণ দরে (ভেজা) ধান বিক্রি করছেন। এক মণ ধান শুকালে ৩০ কেজি হবে। সে হিসাবে কাচা ধানের এই দাম মন্দ নয়।
এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ইতোমধ্যে হাওরের ৮৬ শতাংশ ধান কাটা হয়ে গেছে। হাওরের কৃষকরা যেন দ্রুত ধান ঘরে তুলতে পারেন সেজন্য কৃষি বিভাগ কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ধান কাটার জন্য জরুরি ভিত্তিতে ১৮০ কম্বাইন হারভেস্টার ও ১৩৭টি রিপার সরবরাহের জন্য বরাদ্দ দিয়েছে। বর্তমানে হাওরাঞ্চলে ৩৬২টি কম্বাইন হারভেস্টার ও এক হাজার ৫৬টি রিপার মেশিন সচল রয়েছে।