তখন উনার চাচা জনাব শফিকুল হক(ফার্মাসিষ্ট) সরকারী ভাবে সৌদিআরব চলে গেলেন এবং গ্রামের অনেক লোক পৃথীবির বিভিন্ন দেশে চাকুরির জন্য বসবাস করছিলেন।তন্মধ্যে উনার দাদা জনাব মরহুম হাজী ইব্রাহীম আলী বৃদ্ধ বয়সে কানাইঘাট পোস্ট অফিসে নিজেদের চিঠিপত্র আদান প্রদান করতেন। তখন বাড়ি থেকে পোস্ট অফিসের দূরত্ব ছিল ৭ কিলোমিটার এবং কাচা রাস্তার বেহাল অবস্থা এবং নদী খাল সাঁতরিয়ে পোস্ট অফিসে যেতে হতো। সেই সময় অত্র এলাকায় কোন পোস্ট অফিস ছিল না। একমাত্র পশ্চিম কানাইঘাট পূর্বে সড়কের বাজারে পোস্ট অফিস ছিল তাও প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে।
তখন তিনি মানুষের এই কষ্ট দুর্ভোগ দেখে তিনি এলাকায় একটি পোস্ট অফিস করার চিন্তাভাবনা করেন। সেই প্রক্ষিতে তিনি সিলেট এসে দৈনিক একটি পত্রিকার মাধ্যমে আবেদন করলেন এবং মাসের ভিতর অফিসিয়ালী ভাবে পরিদর্শন করে সমর্থন জানিয়ে চলে গেলেন।পরবর্তীতে সিলেট প্রধান ডাকঘর সুপারেনটেন্ট সাহেবের কাছে তদন্ত রিপোর্ট জমা হলো,তখন তিনি(প্রতিষ্ঠাতা) অনেক দৌড় -ঝাপ করে এবং নিজের অর্থ খরচ করে সিলেট থেকে ঢাকা পিডিও তে পাঠানোর ব্যবস্থা করলেন।
ছবি-প্রতিষ্ঠাতা এনাম সিত্তার
সে সময় তিনি মাঝেমধ্যে গিয়ে খোজখবর নিতেন,এইভাবে আরও ৮-৯ মাস চলে গেল। কিন্তু সিলেট পোস্ট অফিসে গেলে তিনি কোনও সু-উত্তর পান নাই। তখন এই পোস্ট অফিসে ২ জন অফিসার্স ছিলেন যারা উনার পরিচিত বন্ধু ছিলেন। উনারা খবর নিয়ে দেখলেন পোস্ট অফিস রেজিস্টার্ড হয়ে গেছে এবং প্রতিষ্ঠাতা কে ঢাকা পিডিও তে যেতে হবে কারণ উনার সাক্ষর লাগবে,যেহেতু উনি এই পোস্ট অফিসের প্রতিষ্ঠাতা।
এই খবর শুনে তিনি বিলম্ব না করে সাথে সাথে ঢাকা পিডিও তে চলে গেলেন। অফিস যাওয়ার পড় অফিস ইনচার্জ সাহেব চেক করে দেখলেস জুলাই পোস্ট অফিসের সব কাগজপত্র,সীল ছাপ্পর বস্তা বন্দী করে রাখা আছে। এখন উনারা আশ্বাস দিলেন ২/৩ দিনের ভিতর আমরা সিলেট পাঠিয়ে দিচ্ছি।
তখন ১৯৮১ সালের জুন মাস ছিল এবং বলে দিল এই মাসের ভিতর উদ্বোধন করতে হবে নতুবা আরো একবছর পিছিয়ে যাবে।তখন তিনি সিলেট পোস্ট অফিসে প্রতিদিন যাওয়া আসা শুরু করলেন এবং সপ্তাহের মধ্যে জানা গেল যে,পোস্ট অফিসের সব কাগজপত্র সিলেট পোস্ট অফিসে চলে আসছে,এখন শুধু উদ্বোধন করার অপেক্ষায়।সে সময় তিনি সিলেট পোস্ট অফিসের সুপারেনটেন্ট সাহেব এর সাথে যোগাযোগ করে ২৯ জুন উদ্বোধনের দিন ধার্য করেন।অন্যদিকে গ্রামের লোক মারফতে জুলাই নয়ামাটি গ্রামের জনাব জালাল উদ্দিন চৌধুরীকে খবর পাঠিয়ে একটি ঘর ঠিক করার জন্য বললেন।
পরবর্তীতে ২৯ জুন সকালে নিজ খরচে সুপারেনন্টেন সাহেব এবং তার একজন পিয়নকে নিয়ে সমস্ত আসবাবপত্র নিয়ে জুলাই গ্রামে পৌছালেন।পৌঁছার পর আব্দুল হাই সাহেবকে পোস্ট মাস্টার পদে নিযুক্ত করে ১ জন পিয়ন ও ১ জন রানার সর্বমোট ৩ জনের সমন্বয়ে উদ্বোধন করে চলে গেলেন।কিন্তু উনাদের খাওয়া দাওয়া বা আপ্যায়নের ভালো ব্যবস্থা করলেন জনাব মরহুম ইব্রাহীম আলী।
তৎকালীন এই পোস্ট অফিস হওয়ার পরে চিঠি-পত্র,মানি অর্ডার যাবতীয় অফিসিয়াল কাগজপত্র পাওয়াতে অত্র এলাকার মানুষের কি যে উপকৃত হয়েছে তা সেকালের লোকেরা ভালভাবে অবগত আছেন।এখন ৪০ বৎসরের মত চলছে এবং ইনশাআল্লাহ ধারাবাহিকভাবে চলবে। আমিন…………