কিন্তু যে কয়েকজন অতিউৎসাহী অভিভাবক যখন তাদের ছেলে-মেয়েদেরকে হাই স্কুলে পড়াইতে চাইতো তখন তাদেরকে প্রায় হাঁটু পরিমাণ কাঁদা মাড়িয়ে এবং পথিমধ্যে ২-৩টি খাঁল ও নদী সাঁতরিয়ে ঝড়ঝঁঞা উপেক্ষা করে প্রায় ৭ কিঃমিঃ দূরবর্তী বিদ্যাপীঠ কানাইঘাট সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় পাঠাতো হতো। তখনকার ছেলে-মেয়েদের এই দুর অবস্থা দেখে অত্র এলাকার জুলাই আগরছটি গ্রামের জনাব মরহুম মাষ্টার ফয়জুল হক সাহেবের জ্যৈষ্ঠ ছেলে জনাব এম. আব্দুস সাত্তার (এনাম) এর হৃঁদয়ে প্রবলভাবে নাঁড়া দেয়। তখন থেকে তিনি মনে মনে একটি হাই স্কুল প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেন।
ছবি–প্রতিষ্টাতা এনাম সাত্তার।
• এক পর্যায়ে তিনি জনাব মরহুম হিলাল আহমদ এর কাছে তাঁহার এই মনের ইচ্ছা-বাসনা ব্যক্ত করেন এবং তাঁহাকে স্কুলের বর্তমান জায়গাটি দানে উদ্বুদ্ধ করেন এবং পরবর্তীতে উক্ত জায়গার উপযুক্ত মূল্য পরিশোধ সাপেক্ষে স্কুলের নামে রেজিষ্টারী করিয়ে নেন। সে সময়ে তাঁহাকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেন- সর্ব জনাব (১) মরহুম আব্দুর রব (খালপাড়), (২) মরহুম মৌলভী জালাল উদ্দিন (গাং পাড়), (৩) আব্দুল মুছব্বির (মাজর ছটি), (৪) মৌলভী সাজ্জাদুর রহমান ফারুকী, (৫) নুরুল আলম (মাজর ছটি), (৬) মোঃ জালাল উদ্দিন চৌধুরী (নয়ামাটি), (৭) মরহুম মহিবুর রহমান তশীলদার (সাঁতপারি), (৮) মোঃ খলিলুর রহমান (মাজর ছটি)।
• অতঃপর এলাকার তরুণ যুবকদেরকে নিয়ে তিনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাঁশ, গাছ, সুপারী ইত্যাদি উত্তোলন করে প্রাথমিক ফান্ড সংগ্রহ করেন। এবং তিনি শুধু ফান্ড সংগ্রহ করেননি নগদ অর্থ দিয়েও সহযোগিতা করেছেন, যা তিনি প্রকাশ করতে ব্যক্ত নন।
• ১৯৮৮ সালের অক্টোবর মাসে উক্ত স্থানে তিনি স্কুলের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করেন সে সময় তিনি এই স্কুলের নামকরণ করেন JULAI JUNIOR HIGH SCHOOL নামে এবং একই বছরের অক্টোবর নাগাদ বাঁশ ও টিনের কাঁচাঘর নির্মাণ করেন। সে সময়ে এলাকার বিশিষ্ট দানবীর জনাব মরহুম হাজী আতাউর রহমান ও জনাব হাজী মরহুম তাহির আলী (বছুল মেম্বার) সহ অনেকে টিন ও নগদ অর্থ দিয়ে সহায়তা করেন।
• পরবর্তীতে ১৯৮৯ সালের জানুয়ারী মাস থেকে শুধু ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ভর্তির কার্যক্রম ও পাঠদান শুরু হয়। তখন স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ছিল ৪৫ জন।
• প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে প্রধান শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন জনাব মৌলভী নুর উদ্দিন সাহেব এবং তাঁহার সহযোগী শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন জনাব মোঃ আব্দুল মজিদ ও জনাব মোঃ কবির আহমদ।
পরবর্তীতে তিনি সৌদি আরব নিজ কর্মস্থলে চলে যান এবং স্কুলের সম্পূর্ণ দায় দায়িত্ব তিনির বাবা অসবরপ্রাপ্ত জনাব মরহুম মাষ্টার ফয়জুল হক সাহেবকে স্কুল পরিচালনার সব দায়িত্ব দিয়ে যান। দায়িত্বকালীন অবস্থায় স্কুলের যাবতীয় সম্পূর্ণ কাজ চাঁদার মাধ্যমে যেমন- চেয়ার, টেবিল, ডেক্স ইত্যাদি সম্পন করেন। এভাবে প্রায় ৩ বৎসরের মতো চালিয়ে যান। পরবর্তীতে তিনি ডাঃ মোফাজ্জিল হোসেনকে উনার অর্পিত দায়িত্ব সমজিয়ে দেন। তিনি কয়েক বছর পরিচালনা করেন। তখন ক্লাস অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত চলিতেছে এবং ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ছিল প্রায় ২০০ জনের মত।
প্রায় ৪ বছর পর এই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা জনাব এম.এ সাত্তার এনাম এসে দেখলেন এখনও এমপিওভূক্ত হয়নি। তখন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ছিলেন জনাব সিরাজুল ইসলাম, যিনি এখনও স্কুলে শিক্ষকতা করিতেছেন সহকারী শিক্ষক হিসেবে। তখন উনার সাথে আলাপ আলোচনা করে জানতে পারলাম স্কুলের ফান্ডের দরকার এবং অনেক কিছুর দরকার যাহা কেউ সহযোগিতা করিতেছে না। তখন তিনি সিলেট আসার পথে তিনির এক বন্ধু শাহবাগের জনাব এমদাদুল হক চৌধুরীর সাথে দেখা হয় এবং তিনিও সৌদির রিয়াদে থাকেন। তখন উনার সাথে স্কুল ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা করার পর উনি বললেন সিলেট তালতলা শিক্ষা অফিসের প্রধান আমার চাচী। তখন তিনি উনাকে নিয়ে সেই অফিসে গেলেন। উনার সাথে আলাপ-আলোচনা করার পরে উনি বললেন সর্বপ্রথম স্কুলের দলিল বাধ্যতামূলক এবং এক একর জায়গা হতে হবে এবং আরও ৬টি পয়েন্ট সংযুক্ত করলেন এবং এগুলো পূর্ণ করে কুমিলা প্রধান শিক্ষা অফিস বরাবরে পাঠাতে হবে। সেখান থেকে আমার কাছে স্কুল তদন্ত করার জন্য ফাইল চলে আসবে, তখন আমি এটা এমপিও ভুক্ত করার পক্ষে সমর্থন জানাবো।
এরপর তিনি বাড়িতে আসলেন। আসার পর এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ মরহুম ফয়জুল হক মাষ্টার, মরহুম হাজী আতাউর রহমান, মরহুম কুতব আলী চৌধুরী, মরহুম হাজী ইব্রাহীম আলী, মরহুম হিলাল আহমেদ (যিনি স্কুলের জায়গা দিতে সম্মত হয়েছেন), হাজী মরহুম তাহির আলী (বছলু মেম্বার) সহ আরো অনেককে নিয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সবার সম্মতিক্রমে একমত হয়ে স্কুলের আশেপাশের কিছু জায়গা নিয়ে এক একর পূর্ণ করে স্কুলকে এমপিও ভুক্ত করার স্বার্থে রেজিষ্ট্রি করা হয়।
দ্বিতীয়তঃ স্কুলের একটি ফান্ড দরকার। তখন সভাপতি ছিলেন ডাঃ মোফাজ্জিল হোসেন। তিনি বড় অংকের ফান্ডের জন্য একটা নগদ অর্থ দিলেন এবং স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা, আব্দুল মুছাব্বির সহ আরো অনেকে নগদ অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করলেন। তখন জনাব আব্দুল মজিদ সহকারী শিক্ষক ছিলেন এবং উনাদের কাছে সম্পূর্ণ দায় দায়িত্ব দিয়ে কুমিলা শিক্ষা অফিস বরাবরে পাঠানোর জন্য বললেন। এরপর তিনি আবার উনার কর্মস্থল সৌদির রিয়াদে চলে গেলেন এবং বাকী পয়েন্ট গুলো (প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক, অফিস সহকারী, দপ্তরী এবং চৌকিদার) এই সব পদের নাম উলেখ করে কুমিলা শিক্ষা অফিস বরাবরে আবার পাঠানোর জন্য বললেন।
এর পর আলাহর রহমতে ৩-৪ বছরের ভিতরে স্কুল এমপিও ভুক্ত হয়ে গেল এবং এর পর থেকে নবম-দশম শ্রেণীর ক্লাসের কার্যক্রম শুরু হলো।
পরবর্তীতে জনাব আবুল হারিছ চৌধুরীর সহযোগিতায় সরকারীভাবে ৩য় তলা বিল্ডিং সম্পূর্ণ করা হয়। এখন বর্তমানে স্কুলে ৭০০-৮০০ জন ছাত্র-ছাত্রী অধ্যয়ন করিতেছে এবং আলাহর রহমতে এই বৎসরে দশম শ্রেণী পর্যন্ত এমপিও ভুক্ত হয়ে যায়। এর ভিতরে স্কুল কমিটি অনেক রদবদল হয়েছে এবং রদবদল চলিতেছে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, যাহারা এই এলাকাকে ‘শিক্ষার আলোয় আলোকিত’ করেছিল এবং স্কুলের জন্য মাথার ঘাম পায়ে ফেলে এবং নগদ অর্থ দিয়ে এই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন, আজ তাদের কোন মূল্যায়ন নাই। এটা কোন ধরনের অকৃতজ্ঞতা……..? তা আমার বোধগম্য হচ্ছে না। এই বিষয়টি অত্র এলাকার সচেতন জনসাধারণ এবং কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের অবগত হওয়ার প্রয়োজন বলে মনে করি।………আমিন।