সম্প্রতি রাজধানীর ভাটারা এলাকার একটি বাসা থেকে উদ্ধার হয় ব্যবসায়ী সাইফুলের লাশ। ঘটনার পর থেকেই পলাতক ছিল বাসার তরুণ ভাড়াটিয়া দম্পতি। রহস্য উদঘাটনে মাঠে নামে গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেফতার হয় আপেল-শান্তা দম্পতি।
পূর্বপরিচিত সাইফুল তাদের বাসায় বেড়াতে এসে শান্তার সঙ্গে অনৈতিক কাজের প্রস্তাব দেয়। এতে বাধা দিলে শান্তাকে ছুরিকাঘাত করে সাইফুল। কেটে যায় শান্তার পা। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে মদ্যপ সাইফুল নিজের ছুরির আঘাতেই মারা যান। শান্তার পায়ে আঘাতের চিহ্ন দেখে বিশ্বাস করতে চান গোয়েন্দা কর্মকর্তারাও। কিন্তু কোথায় যেন একটু দ্বিধা থেকে যায়।
পরে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে সব স্বীকার করেন আপেল শান্তা দম্পতি। “বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আদায় করাই ওই দম্পতির পেশা। পূর্ব পরিচিত ব্যবসায়ী সাইফুলকে ফাঁদে ফেলে তারা টাকা আদায় করতে চেয়েছিল। সেজন্য আলভীকে দিয়ে প্রলোভন দেখিয়ে সাইফুলকে তাদের বাসায় ডেকে এনেছিল আপেল।
“সেখানে যাওয়ার পর সাইফুলকে প্রথমে বিবস্ত্র করে নির্যাতন ও মারধর করা হয়। এরপর দুই লাখ টাকা দাবি করা হয় তার কাছে।”
গোয়েন্দা কর্মকর্তা মশিউর বলেন, আপেল ঘটনা সাজানোর জন্য তার ফুপাতো ভাই রাকিবকেও সেদিন ডেকে নিয়েছিল বাসায়। এছাড়া নোমান ও হাসান নামে আরও দুজনকে দুই হাজার টাকার বিনিময়ে সেখানে রাখা হয়েছিল, যাদের কাজ ছিল সাইফুলের পাওনাদার হিসেবে অভিনয় করা।
“এক পর্যায়ে নোমান ও হাসান ওই বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। সেই সুযোগে সাইফুল পালানোর চেষ্টা করলে রাকিব তাকে টেনে ধরে এবং আপেল উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে তাকে হত্যা করে।”
মশিউর বলেন, “জিজ্ঞাসাবাদে তারা বলেছে, সাইফুল স্বাস্থ্যবান ও লম্বা হওয়ায় তার লাশ গুম করতে না পেরে খাটের নিচে লুকিয়ে রেখে তারা পালিয়ে যায়।”গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, ঘটনার পরদিন সকালে বাসা থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় ৩০০ ফুট সড়ক এলাকায় একটি সেতুর নিচে ছুরিটি ফেলে যায় শান্তা। তার দেখানো মতে, উদ্ধার করা হয় ছুরিটি। শান্তার কললিস্ট পরীক্ষা করে দেখা যায়, ১৫ দিনে ৬ হাজার ফোন করেছে সে। এ থেকেই বোঝা যায় ফোন করে ব্ল্যাকমেইল করাই ছিল তাদের পেশা।
গোয়েন্দা বিভাগ উপ-কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, বিভিন্ন মানুষদের নেশা জাতীয় দ্রব্য খাইয়ে, টাকা পয়সা নিয়ে নিত।
বাবার এমন নির্মম পরিণতিতে ব্যথিত কন্যা দাবি করলেন সুষ্ঠু বিচার। সাইফুলের মেয়ে বলেন, আমার বাবা নির্দোষ ছিল। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
এ ঘটনার জড়িত রাফি নামে আরো এক যুবককে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে জানায় গোয়েন্দা পুলিশ।
আরও পড়ুন-