১০ দিনব্যাপী দ্বিতীয় ধাপের চিরুনি অভিযানও শুরু হয়েছে গত শনিবার থেকে। এসব অভিযানের পাশাপাশি চলছে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা। কোনো স্থাপনায় এডিস মশা বা লার্ভা পাওয়া গেলেই ভবন মালিকদের করা হচ্ছে আর্থিক জরিমানা। বংশবিস্তারের উপযোগী পরিবেশ পেলেই দেওয়া হচ্ছে সতর্ক নোটিশ। এ ছাড়া প্রতিটি অঞ্চলে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার ৪০টি কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে আবার শুরু হচ্ছে স্থানীয় গৃহবধূদের দিয়ে এলাকায় এলাকায় মশকনিধন কাজের তদারকি। এ ছাড়া নিয়মিত রুটিন কার্যক্রম তো চলছেই। এসব কারণে এবার এডিস মশার দেখা মিলছে না।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, গত বছর এডিস মশার তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে এবার আগেভাগেই প্রস্তুতি নিয়েছি। বিভিন্ন কার্যক্রমও পরিচালনা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে দুই দফা অভিযান শেষ হয়েছে। এখন দ্বিতীয় পর্যায়ের বিশেষ চিরুনি অভিযান চলছে। প্রথম চিরুনি অভিযান সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ায় ভালো ফল মিলেছে। এতে বসে থাকলে চলবে না। দ্বিতীয় ধাপের অভিযান ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। এবার আরও কঠোরভাবে অভিযান চলবে।
মেয়র আরও বলেন, যেসব স্থাপনায় এডিস মশা, লার্ভা বা বংশবিস্তার উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যাবে, সেগুলোকে বিশেষ নজরে রাখা হবে। ভবিষ্যতে আবারও যদি ওই সব স্থাপনায় এগুলো পাওয়া যায়, তাহলে তাদের অনেক বড় আর্থিক দ দেওয়া হবে। কারণ নগরবাসীর সচেতনতা ও সহযোগিতা ছাড়া এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না।
আরও পড়ুন – ডেঙ্গু দমনে ডিএনসিসির চিরুনি অভিযান শুরু
বিশেষজ্ঞদের মতে, মশক নিয়ন্ত্রণের একটি অন্যতম উপায় হলো অভিযান। এবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করেছে। পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অনেক জরিমানাও করেছে। এতে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হচ্ছে। মানুষ যখন তৎপর হয়, তখন মশার দৌরাত্ম্য কমে। তবে মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজন লার্ভা ধ্বংস করা (লার্ভিসাইডিং), উড়ন্ত মশা মারা (অ্যাডাল্টিসাইডিং) ও মশার বংশবিস্তারের উৎসস্থল বন্ধ করা। সিটি করপোরেশন এবার এগুলো করার চেষ্টা করছে।
এ ছাড়া আরেকটি বিষয় হলো, এবার প্রকৃতিও মানুষের পক্ষে আছে। কারণ এবার প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে। থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হলে মশা বাড়ে। এবার সেটা হয়নি। তবে আগস্ট মাস আমাদের জন্য সতর্কতার মাস। সে ক্ষেত্রে আগে থেকেই লার্ভিসাইডিং, অ্যাডাল্টিসাইডিং ও উৎসস্থল নির্মূল করতে পারলে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর দেখা নেই -এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে থাকায় এবার রাজধানীর হাসপাতালগুলোতেও ডেঙ্গু রোগীর তেমন দেখা মিলছে না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গত ১ জুলাইয়ের হিসাব অনুযায়ী, পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের কোনো হাসপাতালে নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়নি। অধিদপ্তরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার সমকালকে জানান, গত ১ জানুয়ারি থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগ নিয়ে ৩১৮ জন ভর্তি হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ৩১৪ জন সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন। ঢাকা শিশু হাসপাতালে তিনজন এবং সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) একজন চিকিৎসাধীন আছেন। এর পর আর নতুন কোনো রোগী হাসপাতালে ভর্তি হননি। চলতি বছর ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে দেশে কোনো রোগী মারাও যাননি।
এদিকে এবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনও (ডিএসসিসি) মশকনিধনে তৎপর হয়ে উঠেছে। ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, মশকনিধন কার্যক্রমে কোনো গাফিলতি হলে ছোট-বড় কেউই ছাড় পাবেন না। ফলে ডিএসসিসিও তৎপর। ডিএসসিসি এলাকাতেও জোরেশোরে চলছে মশকনিধন কার্যক্রম।