এর আগে গত এপ্রিলে বাংলাদেশে নতুন করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার অনুমতি পায় জোবেদা খাতুন সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা (জেকেজি) হেলথকেয়ার।
ফোন করলে বাসায় গিয়ে করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ করা হতো। বিনিময়ে নেওয়া হতো সর্বনিম্ন ৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৮ হাজার ৬০০ টাকা। কিন্তু সেই নমুনার কোনো পরীক্ষা ছাড়া এক দিন পরেই পরীক্ষার ফল দেওয়া হতো। এমন অভিযোগ উঠেছে জোবেদা খাতুন সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার (জেকেজি হেলথকেয়ার) বিরুদ্ধে।
জেকেজি বিনামূল্যে নমুনা সংগ্রহের জন্য ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের পৃথক ছয়টি স্থানে ৪৪টি বুথ স্থাপন করেছিল। এসব এলাকা থেকে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৩৫০ জনের নমুনা সংগ্রহ করত জেকেজি।
এক্ষেত্রে শর্ত ছিল, সরকার–নির্ধারিত করোনা শনাক্তকরণ ল্যাবরেটরিতে নমুনা পাঠাতে হবে। জেকেজি হেলথকেয়ার, ওভাল গ্রুপের একটি অঙ্গসংগঠন।
তবে সম্প্রতি বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করাসহ নিজেদের ইচ্ছেমত ভুয়া কোভিড সনদ দেওয়ার অভিযোগে সংগঠনটির কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
তেজগাঁও অঞ্চলের সহকারী কমিশনার মো. মাহমুদ বলেন, বিনা মূল্যে কার্যক্রম শুরু করলেও একপর্যায়ে জেকেজি অর্থের সংকুলান করতে পারছিল না। তখন তারা বুকিং বিডি ও হেলথকেয়ার নামে আরও দুটি প্ল্যাটফর্ম চালু করে। এ দুটি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অর্থের বিনিময়ে বাসায় গিয়ে নমুনা সংগ্রহের কাজ শুরু করে তারা।
মাহমুদ বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার হুমায়ুন ও তানজীনা বলেছেন, সংগ্রহীত নমুনা তাঁরা ফেলে দিতেন। এরপর নিজেদের ইচ্ছা অনুযায়ী প্যাডে ফল লিখে তা মেইল করে পাঠিয়ে দিতেন।
ওভাল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও জেকেজির সিইও আরিফুল হক চৌধুরীর স্ত্রী চিকিৎসক সাবরিনা আরিফ চৌধুরী বলেন, আদর্শের সঙ্গে না মেলায় এক মাসে আগে তিনি জেকেজি ছেড়ে চলে এসেছেন। বিষয়টি তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককেও জানিয়েছেন। এরপর আরিফুল হক চৌধুরী একদিন তাঁর হাসপাতালে (জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট) এসে ঝামেলা করলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং তিনি নিজে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। এখন তিনি তাঁর বাবার বাসায় অবস্থান করছেন।
আরিফুলের বিরুদ্ধে পরীক্ষা ছাড়াই করোনা শনাক্তের ফল দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি তাঁর জানা নেই। যে দুটি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বাসা থেকে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করা হতো, সে দুটি প্ল্যাটফর্মের বিষয়েও তিনি কিছু জানেন না বলে দাবি করেন।
তেজগাঁও থানা পুলিশের একটি দল সোমবার রাতে আশকোনা থেকে হুমায়ুন কবীর ও তানজিনা পাটোয়ারী নামের এক দম্পতিকে গ্রেপ্তার করে।
পুলিশ কর্মকর্তা মাহমুদ বলেন, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছে করোনাভাইরাসের বেশ কিছু ভুয়া সার্টিফিকেটও পাওয়া যায়। তারা নিজেরাই এসব সার্টিফিকেট তৈরি করেছিল। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, তারা জেকেজির স্বাস্থ্যকর্মী ছিল। সেখান থেকে ভুয়া সার্টিফিকেট বানানো শিখেছে।
এরপর মঙ্গলবার ওই অফিস থেকে চারটি ল্যাপটপ, দুটি ডেক্সটপ, করেনাভাইরাস পরীক্ষার নমুনা নেয়ার বিপুল সংখ্যক স্টিকও জব্দ করে পুলিশ।
আটকরা জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত তারা ৩৭ জনের করোনা নমুনা সংগ্রহ করে মনগড়া রিপোর্ট দিয়েছেন। বাসায় গিয়ে স্যাম্পল সংগ্রহ করতে জনপ্রতি ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা তারা নিয়েছেন।
এদিকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদের জেকেজির স্বাস্থ্যকর্মীরা সন্ধ্যায় তেজগাঁও থানার সামনে বিক্ষোভ শুরু করলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।