1. asifiqballimited@gmail.com : Asif Iqbal : Asif Iqbal
  2. Kamrulsohan55@gmail.com : কামরুল সোহান : কামরুল সোহান
  3. khoshbashbarta@gmail.com : ইউনুছ খান : ইউনুছ খান
রবিবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:১৫ অপরাহ্ন
খোশবাস বার্তা

কেন নিজেকে বিক্রির উদ্যোগ? কিছু আলোচনা ও সমালোচনার জবাব

গাজী আনিস । সমাজকর্মী ও সাংবাদিক
  • প্রকাশিতঃ রবিবার, ৩০ মে, ২০২১
  • ১৪৮৩ বার পঠিত

আমি গাজী আনিস। আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায়। আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে বারবার স্বপ্ন হারাচ্ছি। ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলার কবলে পড়ে আমার ৯ বছরের চাচতো ভাই গরুর লেজ ধরে পানিতে ডুবে যাওয়া থেকে বেঁচে ফিরে আসে। ঘূর্ণিঝড় ফনির আঘাতেও আমার অনেক আত্মীয় বাড়িছাড়া হয়ে এখনো বেড়িবাঁধের ওপর জীবনযাপন করছেন। টেকসই বেড়িবাঁধের অভাবে আমাদের এই দুর্ভোগ।

প্রতি বছর কয়েক বার বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়, উঠে দাঁড়াতে গিয়েও বারবার পড়ে যাই আমরা। উপকূলীয় অঞ্চলের সার্বিক পরিস্থিতি মাথায় রেখে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা ও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবিতে নিজেকে বিক্রি করার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। পৃথিবীর সব ধরণের অশান্তি ও অস্থিরতাসহ উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের কষ্টগুলো আমাকে খুবই পীড়া দেয়। টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা যাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে, তাদের অবহেলার কারণেই বারবার আমরা বিপদের সম্মুখীন হচ্ছি।

গত বছর ঘূর্ণিঝড় ‘ফণি’র আগে যমুনা টেলিভিশনের ‘মন্ত্রী সাহেব’ অনুষ্ঠানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান এমপির সঙ্গে বেড়িবাঁধ নিয়ে কথা বলেছি, সে ভিডিও অনেকেই দেখেছেন। ঘূর্ণিঝড় ফণির পর তিনি অফিসিয়াল কাজে আমাদের শ্যামনগরের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছিলেন। পরবর্তীতে মাননীয় প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে শ্যামনগরের মানুষের যে দুর্দশা দেখেছেন, তা উল্লেখ করেছিলেন। সাধারণ মানুষ থেকে দেশের বিভিন্ন স্তরের মানুষেরা উপকূলীয় এলাকার দুঃখ জানেন। কিন্তু আমরা আশ্বাস পাই, কাজের বাস্তবায়ন হয় না। তাই প্রতিবাদ হিসেবে ও টেকসই বেড়িবাঁধের দাবি বিক্রি হওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলাম।

আমার প্ল্যাকার্ডে হ্যাশট্যাগ দিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা ও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবির কথা উল্লেখ ছিল। আমি একটি ভিডিও বার্তাও দিয়েছিলাম। ভিডিও বার্তায় আমার উদ্দেশ্য প্রকাশ করেছি। তবে কিছু বিষয় নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। এর কারণ হতে পারে- আমার ভিডিও বার্তা না দেখা, প্ল্যাকার্ডের হ্যাশট্যাগ খেয়াল না করা। সবার মতামতকে আমি শ্রদ্ধা করি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য থেকে শুরু করে অনেকেই কল করেছিলেন, সবাইকে আমার উদ্দেশ্যের কথা বলেছি।

রাত ১টা ৩৫ মিনিটেও কল করে একজন কথা বলেছেন, আমি রাগ করিনি। সবার সঙ্গে নম্রভাবে কথা বলেছি। আশা করি তাঁরা আমার সঙ্গে কথা বলে মনে জমা হওয়া ঝাপসা বিষয়গুলোর স্পষ্ট জবাব পেয়েছেন। আপত্তির মূল যে বিষয়টা সামনে এসেছে তা হলো- মোবাইল ব্যাংকিং নম্বর দেওয়া। ধারণা ছিল- যদি কেউ ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সহযোগিতা করতে চায়, তাঁরা উল্লিখিত নম্বরে কথা বলে কিংবা সরাসরি সহযোগিতা করতে পারবেন। এখানে আমি স্বচ্ছতা রক্ষা করতে পারব বলেই বিশ্বাস করে নম্বর দেওয়া। পরিচিত এক ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি, সম্প্রতি কেউ কেউ ফিলিস্তিনিদের সহযোগিতা করার কথা বলে মোবাইল ব্যাংকিং মাধ্যমে প্রতারণা করেছেন। আমিও তাঁদের মতো করি কি না- মূলত এই সন্দেহ ভর করেছে অনেকের মনে। বিষয়টি আগেই উপলব্ধি করেছিলাম। কিন্তু আমি চেয়েছিলাম অল্প-বেশি যে টাকা জমা হোক, মোবাইল ব্যাংকিং কোম্পানির কাছে আবেদন করে টাকা জমা হওয়ার একটা লিস্ট বের করে নিরাপত্তার জন্য প্রতি মোবাইল নম্বরের কয়েকটা সংখ্যা হাইড করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা প্রকাশ করব। আধুনিক এই যুগে তা সম্ভব বলে মনে করি।

প্রকৃতপক্ষে, আমরা নিজেদের স্বার্থ নিয়ে ভাবতে ভাবতে এতদূর চলে গেছি যে, কেউ মানুষের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কিছু করছে শুনলে মনে দীর্ঘ সন্দেহ দানা বাঁধে! আর বর্তমানে মানুষের নৈতিকতার অবক্ষয় দেখতে দেখতে কোনো কিছুকে বিশ্বাস করা বেশ কষ্টকর। সেই হিসেবে আমিও সন্দেহের বাইরে কেউ নই। আমি যাদের চেনাজানা, তারা জানেন আমার দীর্ঘ দিনের সংগঠনিক অভিজ্ঞতা আছে। অনেকেই শৈশব থেকে আমার প্রতি আস্থা রেখেছেন, আমি কখনো বিশ্বাসের অমর্যাদা করিনি। মৃত্যু ঝুঁকি নিয়েও মানুষের উপকারে নিজেকে বিলিয়েছি। কেউ কেউ সমালোচনা করেছেন দেখে বেশি খুশি হয়েছি, কারণ আপনাদের মাধ্যমে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের করুণ অবস্থা, তাঁদের টেকসই বাঁধের দাবি বার বার সামনে আসছে। যদি প্রমাণিত হয়- আইন কিংবা সমাজের দৃষ্টিতে আমি ভুল করেছি, বিষয়টি মেনে নিতে আমার কষ্ট হবে না, কারণ সত্যকে স্বীকার করতে আমি কঠোর নই। আপনাদের আলোচনার মাধ্যমে যদি টেকসই বেড়িবাঁধ হয়, তাহলে আলোচনা হোক। ঘুম থেকে জেগে আমাদের শিশুরা তাদের অক্ষত স্কুল চায়; সবুজ আঙিনা যেন আরো সবুজ হয়, লবণ মিশ্রিত ধূসর না হোক- তা আমাদের চাওয়া। যে শিশুর, যে বৃদ্ধের পরিবর্তনটা এখনই দরকার, তাকে কেন আগামীর আশ্বাস দেবেন। একবারও কি ভাবনা আসে না- আগামীতে অবহেলায় শিশুটা হয়তো ঝরে যাবে, বৃদ্ধেরও স্থান হবে পরপারে!

-গাজী আনিস

৩০ মে, ২০২১ (রোববার)।

খোশবাস বার্তা

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
corona safety
সত্বাধিকার © খোশবাস বার্তা ২০১৬- ২০২৪
ডেভেলপ করেছেন : TechverseIT
themesbazar_khos5417