1. asifiqballimited@gmail.com : Asif Iqbal : Asif Iqbal
  2. Kamrulsohan55@gmail.com : কামরুল সোহান : কামরুল সোহান
  3. khoshbashbarta@gmail.com : ইউনুছ খান : ইউনুছ খান
শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫, ০৯:০৮ অপরাহ্ন
খোশবাস বার্তা

স্মরণে আলোকিত শিক্ষক ইউনুছ মিয়া

ইউনুছ খান
  • প্রকাশিতঃ সোমবার, ৮ জুন, ২০২০
  • ২২২১ বার পঠিত
আলোকিত শিক্ষক

শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীকে পাঠবুঝিয়ে দিলেই শিক্ষকের দায়িত্ব শেষ নয়, পাঠ্যবিষয়ের বাইরে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় মূল্যবোধের আলোকে শিক্ষার্থীর আচরণ নিয়ন্ত্রণ করা শিক্ষকের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এ অর্থে বিদ্যালয়কে ‘সমাজের ক্ষুদ্র সংস্করণ বলা হয়’। অনেক সময় পরিবারের দীর্ঘদিনের লালিত সংস্কারেও আঘাতহানে শিক্ষকের উপদেশ। হ্যামিলনের বাঁশির মতো সব কিছু ভুলিয়ে দিয়ে ভাবতে শেখায় নতুন কিছু যা কিছু বাঞ্ছিত, মার্জিত ও ইতিবাচক। আমি আজ এমন একজন শিক্ষকের কথা বলব তিনি শুধুই শিক্ষক নন তিনি একজন প্রশিক্ষকও বটে।

রামমোহন তমিজিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসর প্রাপ্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক সদ্য প্রয়াত মোঃ ইউনুছ মিয়া। তিনি তাঁর নৈতিক আদর্শ দিয়ে রামমোহন তমিজিয়া উচ্চ বিদ্যালয়কে হৃদয়ে ধারণ করে দীর্ঘদিন বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে পাঠদান করেছেন। তিনি ২০১৬ সালে অত্র বিদ্যালয় থেকে সরকারী ভাবে অবসর গ্রহণ করলেও স্কুলের পরিচালনা পর্ষদের আগ্রহে ২০১৮ সালের শেষ অবধি বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের পাঠদান সহ রামমোহন তমিজিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়ন কাজে নিজেকে সমর্পণ করে দিয়েছিলেন।
তাঁর স্মৃতির প্রতি সম্মান দেখাতে ভুলেননি অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গৌরাঙ্গ পদ রায় চৌধুরী থেকে শুরু করে তাঁর অগণিত ছাত্রছাত্রীরা। ভালোবাসায় শ্রদ্ধায় এই মহান শিক্ষকের কথা স্মরণ করছেন তারা। প্রধান শিক্ষক গৌরাঙ্গ পদ রায় চৌধুরী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক স্ট্যাটাসে লিখেন,
“২০১৮ খ্রিস্টাব্দের শেষভাগে এসে স্বাস্থ্যগত কারণে ইউনুছ স্যার শ্রেণি পাঠদানে অংশ গ্রহণ করতে পারেননি। কিন্তু যখনই বিদ্যালয়ের কোনো গুরুত্বপূর্ণ কর্মে ইউনুছ স্যারের প্রয়োজন হতো তখন তাকে স্মরণ করা মাত্রই চলে অাসতেন এবং কোনো বিনিময় ব্যতিত দিনের পর দিন সময় দিয়েছিলেন। কখনোই বলতে শুনিনি তাকে এখানে এসে আমার লাভ কী? কতো সূক্ষ্ম হিসেব ছিলো ইউনুছ স্যারের। বিদ্যালয়ের কোনো অর্থের যেন অপচয় না হয়। সেই দিকে তিনি সময় খেয়াল রাখতেন।২০১০ সালের নভেম্বরে আমি প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পর সর্বাগ্রে স্যারের সাথে এবং এরপর শিক্ষক-কর্মচারি, শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং কমিটির মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করে এ বিদ্যালয়ের সম্মুখের অনড় পাথরগুলো সরানোর চেষ্টা করি এবং তা সম্ভব হয়েছিল বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র আবুল বাসার এবং ইউনুছ স্যারের অগ্রণী ভূমিকার কারণেই। কোনো শিক্ষার্থী আঘাত পেলে ইউনুছ স্যার তাদেরকে সর্বাগ্রে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতেন। অথচ ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস ইউনুছ স্যার কে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার কোনো সময়ই পেলনা তাঁর স্নেহার্থী ছাত্ররা তার আগেই স্যার চলে গেলেন নীরবে ।যদি রবীন্দ্রনাথের মত বলি ‘ তুমি রবে নিরবে হৃদয়ে মম’ নিজ সংসার থেকেও তিনি বেশি ভালোবাসতেন রামমোহন তমিজিয়া উচ্চ বিদ্যালয়কে,যার জন্যে স্যার কে অমূলক অনেক কিছুই নিরবে সহ্য করতে হয়েছিল। আমরাও ভালোবাসি স্যার আপনাকে, অপাড়ে পরম শান্তিতে থাকুন স্যার।”
বিদ্যালয়ের এক প্রাক্তন ছাত্র লিখেন, “স্যার ক্লাসে প্রায় একটা কথা বলতেন আমাদের কে ‘মাহাজন খুশি করার পড়ালেখা করো না। জানার জন্য, শিখার জন্য পড়ো। সাথে সাথে আরেকটি কথাও বলতেন, ‘জ্যামিতি বক্স শোকেইসে সাজাইও না তার ব্যবহার শিখ।”
খোশবাস বার্তা
ইউনুছ স্যারের প্রয়াণে অত্র বিদ্যালয়ের দফতরি সুধাংশু লিখেন, “রামমোহন তমিজিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের মামলা পরিচালনার জন্য যখন সবসময় আমাকে নিয়ে কুমিল্লায় যেতেন, একদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম স্যার আমাকে আপনার সাথে এনে কি উপকার হয়? স্যার প্রতিত্তোরে বললেন, সুদু (সুধাংশু) আমি কি করি তুমি তার রাজসাক্ষী হয়ে থাকলে।”
ইউনুছ স্যার তাঁর বিদ্যালয়ের হিসেবনিকেশে এতটাই স্বচ্ছ ছিলেন যে, তিনি কোথাও গেলে নিজের পকেটের টাকা খরচ করতেন কখনো বিদ্যালয়ের অতিরিক্ত টাকা খরচ করে হিসেবে তুলতেন না। ছাত্রছাত্রীদের অসীম স্নেহ দিয়েই ক্রান্ত হননি করেছেন শাষণ ও।
২০১৮ সালের মাঝামাঝি খোশবাসের সনামধন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শাকি লাইব্রেরির ১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে একটা বৈশাখী মেগা কুইজের প্রশ্নপত্র নিয়ে রামমোহন তমিজিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে আমি কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবীকে পাঠিয়ে ছিলাম। পাঁচ টাকা দিয়ে প্রশ্নপত্র ক্রয় করে ছাত্রছাত্রীরা যেন এই কুইজে অংশ গ্রহণ করেন। প্রায় ১৫ টি বিদ্যালয় আমাদের প্রশ্নপত্র রিসিভ করলেও রামমোহন তমিজিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে বাঁধা হয়ে দাঁড়ালেন ইউনুছ স্যার। তিনি রামমোহন তমিজিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীকে পাঁচ টাকা দিয়ে প্রশ্নপত্র কিনে কুইজে অংশ গ্রহণ করতে দিবেন না, স্বেচ্ছাসেবীদের বললেন, ফ্রি প্রশ্নপত্র দিলে স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা কুইজে অংশ গ্রহণ করবে। স্বেচ্ছাসেবীরা আমাকে ফোনে জানাল ইউনুছ স্যার আমাদের কে ফ্রি প্রশ্নপত্র দিতে বলছে আর যদি ফ্রি প্রশ্নপত্র দেওয়া না হয় তাহলে উনার স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা এই কুইজে অংশ গ্রহণ করবে না। আমি তৎকালীন সময়ে স্বেচ্ছাসেবীদের বললাম রামমোহন তমিজিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রশ্ন দেওয়া লাগবেনা তোমরা চলে এসো।
পরবর্তীতে ওই স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা লাইব্রেরি থেকে প্রশ্নপত্র টাকা দিয়ে সংগ্রহ করে এবং সেই বছর রামমোহন তমিজিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির একজন প্রথম হয়। সে তখন দশ হাজার টাকার পুরস্কার জিতে নেয়। আমরা আমাদের ন্যায়দণ্ড কে ঠিক রেখে রামমোহন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতি সুবিচার করেছি তাদের প্রতি আমরা প্রতিশোধ পরায়ন হইনি। কারণ ইউনুছ স্যার যেইটা করেছেন, তাঁর স্কুলের ছাত্রছাত্রীর পয়সা বাঁচাতে এবং তাদের প্রতি প্রবল ভালোবাসার কারণেই তিনি এইটা করেছেন। স্কুলের স্বার্থটাকে তিনি সব সময় দেখতেন। তিনি গণিতের শিক্ষক ছিলেন, স্যারের বাড়ি খোশবাস ইউনিয়নের বাঁশতুলি গ্রামে, খোশবাস স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা এই আলোকিত শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়তে যেতেন। কারণ তিনি গণিত ভালো বুঝতেন। সদা হাস্যময়ী এই শিক্ষকের মৃত্যুতে একজন ত্যাগী অভিভাবক হারালো হাজারো ছাত্রছাত্রীরা।
যেদিন তিনি মৃত্যু বরণ করেন, সেদিনও সকালেও তাঁর পুত্রবঁধু মরিয়ম কে বলেছিলেন, খাশির মাংস রান্না করতে। তাঁর পছন্দের খাবার খেলেন ছেলে মেয়েদের সাথে কথা বললেন তারপর ঘরে গিয়েই তিনি স্রষ্টার ডাকে চলে গেলেন।
শিক্ষক যখন শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের কোন বিষয় বুঝিয়ে দেন বা শিখিয়ে দেন তখন তিনি শিক্ষক; যখন সৃজনশীলতা, সততা, দক্ষতা, নৈতিকতা, শৃঙ্খলা, নিয়মানুবর্তিতা, শিষ্টাচার, দেশপ্রেম, নেতৃত্ব ,কষ্টসহিষ্ণুতা, গণতন্ত্রীমনষ্কতা ও পরমতসহিষ্ণুতা ইত্যাদি সহ শিক্ষাক্রমিক কার্যক্রমের বিষয়গুলো নজরদারিতে রাখেন ও নিয়ন্ত্রণ করেন তখন ঐ শিক্ষকই একজন প্রশিক্ষক এবং আলোকিত শিক্ষক।নিশ্চয় সদ্য প্রয়াত রামমোহন তমিজিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক ইউনুছ মিয়া একজন আলোকিত শিক্ষক ছিলেন। তাকে শ্রদ্ধার্ঘ করেই রবীন্দ্রনাথের গীতবিতান থেকে…
‘তখন কে বলে গো
সেই প্রভাতে নেই আমি।
সকল খেলায় করবে খেলা
এই আমি–
আহা,নতুন নামে ডাকবে মোরে,
বাঁধবে নতুন বাহু-ডোরে,
আসব যাব চিরদিনের সেই আমি।
তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে,
তারার পানে চেয়ে চেয়ে
নাইবা আমায় ডাকলে॥
যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে।
খোশবাস বার্তা

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
corona safety
সত্বাধিকার © খোশবাস বার্তা ২০১৬- ২০২৪
ডেভেলপ করেছেন : TechverseIT
themesbazar_khos5417