১৯৮৮ সালের ১১ ডিসেম্বর, আজকের এই দিনে,পার্থিব পাঠ শেষ করে পরপারে চলে যান শিক্ষানুরাগী,শিক্ষক,সমাজ সেবক,অপ্রতিরোধ্য সংগ্রামী জ্ঞান তাপস মমিনুল হক ভূঁইয়া।
১৯০৩ সালে খোশবাস ভূঁইয়া পরিবারের বংশ আলো করে আবির্ভাব তাঁর।বৃটিশ শিক্ষা ব্যবস্থায় ষষ্ঠ শ্রেণিতে তিনি বৃত্তি লাভ করেন এবং কুমিল্লা জিলা স্কুলে প্রথম হয়ে এন্ট্রাস পাশ করেন। জিলা স্কুলের অনার্স বোর্ডে তার নামাঙ্কর এখনো লিপিবদ্ধ আছে।পরবর্তীতে তিনি ১৯২৩ সালে ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে বি,এ পাশ করেন। কর্মজীবনের শুরুতে ডাক বিভাগে কর্মরত ছিলেন,ফলশ্রুতিতে ১৯৫২ সালে তাঁর হাত ধরেই খোশবাস গ্রামে ডাক অফিস চালু হয়।জ্ঞান তাপস মমিনুল হক ভূঁইয়া চাকুরী থেকে অবসরে যাওয়ার পর সামাজিক কর্মকান্ডে গভীরভাবে জড়িয়ে পড়েন। তাঁর তীক্ষ্ণ মেধাশ্রমে খোশবাস উত্তর ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা পায় এবং তিনি প্রথম চেয়ারম্যান হিসেবে ১৯৬০-৬৫ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।১৯৬৪ সালে সফল চেয়ারম্যান হিসেবে রেডিও পাকিস্তান থেকে তার সাক্ষাৎ নেয়া হয়।শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি কল্পে তিনি ব্যাকুল ছিলেন। বিশাল ভূসম্পত্তির অধিকারী গোষ্ঠীর আরেক দানবীর মরহুম শ্রদ্ধেয় জয়নাল আবেদীন এর কাছে শিক্ষা বিস্তারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে উচ্চ বিদ্যালয়ের জন্য জমি প্রাপ্তির আলোচনা করেন।কালবিলম্ব না করে শ্রদ্ধেয় জয়নাল আবেদীন সাহেব বর্তমানে অবস্থিত উচ্চ বিদ্যালয়ের যায়গাটি বিদ্যালয়ের জন্য দান করেন। ১৯৬৯ সালে জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়ার দানকৃত যায়গার উপর তাঁর তীক্ষ্ণ মেধাশ্রমের উদ্যোগে খোশবাস উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তিনি প্রথম প্রধান শিক্ষক হিসেবে ইংরেজি বিষয়ে নবম,দশম শ্রেণির পাঠ দান করিয়েছিলেন।
উত্তর বরুড়ার এই মহা মনিষীর কথা তরুণ প্রজন্ম যখন ভুলতে বসেছিল তখনি ২০২২সালের ২০ ফেব্রুয়ারি খোশবাস বার্তা’র ৬ষ্ঠ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ম্যাগাজিনে তাঁর ছবি দিয়ে প্রচ্ছদ এঁকেছেন খোশবাস বার্তা। ম্যাগাজিনে তাঁর দৌহিত্রী ফাহমিদা সুলতানার একটি বিশেষ প্রতিবেদন ছিল ‘স্মরণে জ্ঞানতাপস মমিনুল হক ভূঁইয়া ‘ এই প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার পর সমগ্র বরুড়ার নতুন ভাবে আবার আলোচনায় আসলেন মমিনুল হক ভূঁইয়া।
তিনি খোশবাস ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষদের কাছে হক সাহেব হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ৮৫ বছরের বর্ণাঢ্য জীবনে সমাজ ও দেশের জন্য নিজের ভোগবিলাসী জীবন ত্যাগ করে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের উন্নয়ন ও গ্রামীণ পরিবেশে শিক্ষার উন্নয়নে অগ্রদূত হিসেবে আমৃত্যু কাজ করে গেছেন। এলাকার রাস্তাঘাট, কালভার্ট সহ বহু উন্নয়ন করেন। গভীর নলকুম বসিয়ে নিরাপদ খাবার পানির ব্যাবস্থা করেন। সফল ভাবে চেয়ারম্যান এর দায়িত্ব পালন করায় ১৯৬৪ সালে তৎকালীন রেডিও পুর্ব পাকিস্তান থেকে তাঁর সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়। তিনি যখনই যে কাজ করেছেন নিজের দায়িত্ব কর্তব্য ভেবেই করেছেন।আলোকিত মহৎপ্রাণ মমিনুল হক ভূঁইয়া জীবনে যখন যেটাই করতে চেয়েছিলেন সেটাই নীজ আত্মবিশ্বাসে করতে পেরেছিলেন এবং তিনি সফলও হয়েছিলেন। পারিবারিক জীবনে ২ ছেলে ও ৫ কন্যা সন্তানের জনক ছিলেন তিনি। কর্মময় ভুবনের ব্যস্ততার মাঝেও তিনি তাঁর ছয় জন সন্তান কে সেই সময় সুশিক্ষিত করে গিয়েছিলেন বর্তমানে তাঁর সন্তানেরা দেশে ও দেশের বাহিরে নানান পদে কর্মরত আছেন এবং সবাই নীজ নীজ শিক্ষা-দীক্ষায় সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।