1. asifiqballimited@gmail.com : Asif Iqbal : Asif Iqbal
  2. Kamrulsohan55@gmail.com : কামরুল সোহান : কামরুল সোহান
  3. khoshbashbarta@gmail.com : ইউনুছ খান : ইউনুছ খান
রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:২৭ পূর্বাহ্ন
খোশবাস বার্তা

করোনার থাবায় বিপর্যস্ত কিন্ডারগার্টেন এর ৮ লাখ শিক্ষক কর্মচারীর জীবন

মেহেদী হাসান | ঢাকা |
  • প্রকাশিতঃ বৃহস্পতিবার, ২ জুলাই, ২০২০
  • ১৬৯২ বার পঠিত
কিন্ডারগার্টেন

বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রভাবে সারা বিশ্ব আজ চরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন। সারা বিশ্বের অর্থনীতি আজ চরম হুমকির মধ্যে পড়েছে। বাংলাদেশও আজ চরম সংকটের সম্মুখীন। করোনার কারণে বিপর্যস্ত দেশের কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো। দিনের পর দিন বন্ধ থাকায় আয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাড়িভাড়ার পাশাপশি শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দিতে পারছে না প্রতিষ্ঠানগুলো। এমন পরিস্থিতিতে অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান বিক্রি করার জন্য নোটিশ ঝুলিয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে কিন্ডারগার্টেন স্কুলের ৮ লাখ শিক্ষক কর্মচারীর জীবন।

বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের কাছে আসা তথ্যমতে এখন পর্যন্ত ঢাকায় অন্তত ২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। আর বেশকিছু প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে দেয়ার নোটিশ দেয়া হয়েছে।

করোনার সংকটের ফলে দেশের সরকারি, বেসরকারি সকল বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ এবং সকল পরীক্ষা স্থগিতের ফলে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রেও চরম সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে বিভিন্ন চুড়ান্ত পরীক্ষা স্থগিতের ফলে শিক্ষার্থীরা চরম হতাশায় নিমজ্জিত হয়েছেন। এমনও শিক্ষার্থী আছে যাদের একটি বা দুইটি পরীক্ষা বাকি ছিল তারাও আটকা পড়ে গেছেন। আকস্মিক এই অনির্ধারিত বন্ধের ফলে বিশ্ববিদ্যালয় সেশনজটের কবলে পড়তে যাচ্ছে।

করোনার প্রভাবে শুধু শিক্ষার্থী নয়, শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও চরম হুমকির মধ্যে পড়েছে। সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীরা যে বেতন পান তা দিয়ে হয়ত চালিয়ে নিতে পারবে। এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীরা সরকারি যে বেতন পান তা দিয়ে তাদের সংসার চালানো দায়। তারা প্রতিষ্ঠান থেকে যে বাড়ি ভাড়া ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পান তা দিয়ে কোনওরকমে সামলে নেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তাদের জীবনধারণও কঠিন হয়ে পড়ছে। তবে বেসরকারি নন-এমপিও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যারা মূলধারার শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট তাদের অবস্থা অত্যন্ত করুণ। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে নামমাত্র কিছু বেতন পেয়ে থাকেন। কোথাও কোথাও তাও পান না। বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি ও বন্ধ। এছাড়া টিউশনি করে যারা কোনওরকম জীবন নির্বাহ করতেন তাদের টিউশনিও বন্ধ। এমতাবস্থায় তারা চরম আর্থিক সংকটে নিপতিত হয়েছেন।

গত ১৬ মার্চ থেকে একযোগে বন্ধ ঘোষণা করা হয় দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এরপর ৪ দফা বেড়েছে বন্ধের মেয়াদ। সম্প্রতি সীমিত পরিসরে বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হলেও আগামি সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠাগুলো বন্ধ রাখার ইঙ্গিত মিলেছে।

বন্ধ স্কুলগাড়ির চাকা, ধুলোপড়া খেলার সামগ্রি। নিরব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নিভৃতে নি:স্ব করে দিচ্ছে প্রায় ৮ লাখ শিক্ষক কর্মচারীকে। কিন্ডারগার্ডের স্কুলগুলোর বেতন হয় শিক্ষার্থীদের ফি আর টিউশনি থেকে। ফি আদায় করা যাচ্ছে না আবার নিষেধাজ্ঞার কারণে টিউশনিও করানো যাচ্ছে না। অনেকটা মানবেতর জীবন যাপন করছেন শিক্ষকরা।

বাড্ডা আদর্শ বিদ্যানিকেতন এন্ড হাই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জনাব হাজী মো. আব্দুল মান্নান বলেন, “মার্চ মাস থেকে শিক্ষকদের বেতন দিতে পারছেন না তারা। কিন্ডারগার্ডের স্কুলগুলোর বেতন হয় শিক্ষার্থীদের ফি আর টিউশনি থেকে। ফি আদায় করা যাচ্ছে না আবার নিষেধাজ্ঞার কারণে টিউশনিও করানো যাচ্ছে না। অনেকটা মানবেতর জীবন যাপন করছেন শিক্ষকরা।”

তিনি আরও বলেন, “দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে কিন্ডারগার্টেন স্কুল গুলোর অনেক অবদান রয়েছে। তাই করোনার এই দুর্যোগে সরকারের উচিত আমাদের সহায়তা করা। সরকারই আমাদের অভিভাবক। সরকার বিষয়টি বিবেচনা করবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি।”

এই স্কুলের শিক্ষক  মোঃ শেখ রাসেল বলেন, “আমাদের স্কুলটিতে নিম্ন আয়ের মানুষের সন্তানরা লেখাপড়া করে। বেতন অনেক কম। শিক্ষার্থীদের বেতনের টাকা দিয়ে স্কুলের ঘর ভাড়াসহ শিক্ষকদের বেতন পরিশোধ করা সম্ভব হয় না। প্রতি মাসে কিছুটা ঘাটতি থাকে। পরীক্ষার ফি নিয়ে সেসব ঘাটতি পূরণ করা হতো। এর মধ্যে দুই মাস স্কুল বন্ধ থাকায় বড় ধরনের ঘাটতি তৈরি হয়ে গেলো। শিক্ষকদের বেতন বন্ধ থাকায় পরিবার নিয়ে তাদের চরম হতাশায় দিন কাটছে। এই অবস্থায় সরকারের একান্ত সহযোগিতা ছাড়া ঘুরে দাঁড়ানো কোনোভাবেই সম্ভব হবে না।”

বাড্ডা নীলাচল স্কুল এন্ড কলেজের এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি  আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন এর অংশিদার হিসেবে কিন্ডারগার্টেন স্কুল গুলোর অবদান উল্লেখ করার মত। আজকে অনেক নামি-দামি শিল্পপতি থেকে শুরু করে দেশের আমলা সরকারি চাকুরীজীবি অনেকেই বিভিন্ন কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষার্থী ছিলেন। কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক/শিক্ষিকারা নাম মাত্র বেতনে চাকরি করেন আর পাশাপাশি, ২/১ টা টিউশনি করিয়ে কোনরকম সংসার টিকিয়ে রাখেন, কিন্তু মহামারির এই সময়ে স্কুল ও টিউশনি না থাকায় অনেকে ভিন্ন পেশায় যুক্ত হয়েছেন। অনেকে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এই মুহুর্তে সরকারের উচিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো না খোলা পর্যন্ত সাময়িক সহায়তা বা প্রণোদনা দিয়ে শিক্ষক সমাজকে টিকিয়ে রাখা। নয়ত ভবিষ্যতে শিক্ষা ব্যবস্থা হুমকির মুখে দাড়াতে পারে”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিন্ডারগার্টেন বিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকার কষ্টকর অভিজ্ঞতা, “বেতন না পাওয়ায় যিনি, তার চার সদস্যের পরিবার পরিচালনার জন্য একরকম যুদ্ধ করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, “আমি এবং আমার স্বামী যে সামান্য বেতন পাই তার সবটুকু চার সদস্যের সংসার চালাতে ব্যয় করেছি, সে হিসাবে আমার কোন সঞ্চয়ও নেই। এখন, আমরা কীভাবে খাবারের ব্যবস্থা করতে পারি বা বাড়ি ভাড়া কীভাবে দিতে হয় তা আমরা জানি না। আমাদের এসব কথা শোনারও কেউ নেই। আমরা এখন নিরুপায়।”

দেশের প্রায় ৩০ ভাগ প্রাথমিক শিক্ষার চাহিদা পূরণ করে কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো। দীর্ঘসময় এ অবস্থা চলতে থাকলে ৯০ভাগ স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি সেপ্টেম্বর অবধি বন্ধ থাকলে শিক্ষা খাতের জন্য এটি দুর্ভাগ্য হতে পারে। সরকারী সুবিধাভোগী তালিকার বাইরে থাকা শিক্ষক এবং অন্যান্য পেশাদারদের তাদের পরিবার-পরিজনদের কথা চিন্তা করে বেতন প্রদানের ব্যবস্থা করা অতীব জরুরী। এই সময়োপযোগী সমর্থন সমাজে সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তিদের প্রয়োজনে তাদের জন্য আশীর্বাদ বয়ে নিয়ে আসতে পারে।

খোশবাস বার্তা

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
corona safety
সত্বাধিকার © খোশবাস বার্তা ২০১৬- ২০২৪
ডেভেলপ করেছেন : TechverseIT
themesbazar_khos5417