প্রয়াত কামাল লোহানীর ছোট ভাই মোস্তাক লোহানী বলেন, সোনতলা কবরস্থানে তার স্ত্রী দিপ্তী লোহানীর কবরেই তাকে দাফন করা হলো। এ কবরস্থানে আমাদের বাবা মুছা আলী খান লোহানী, মা রিজিয়া লোহানী, ভাই দেলাল লোহানীসহ আমাদের সব প্রয়াত আত্মীয়-স্বজনেরা শায়িত আছেন।
শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে অনুষ্ঠিত জানাজায়, সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য তানভীর ইমাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ফিরোজ মাহমুদ, উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী শফিকুল ইসলাম শফি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফুজ্জামান, আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার গোলাম মোস্তফা, সলপ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী শওকত ওসমানসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ অংশ নেন।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় করোনায় আক্রান্ত কামাল লোহানী শনিবার (২০ জুন) সকাল ১০টার দিকে ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান। পরে কামাল লোহানীর মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি রাত সোয়া ৯টার দিকে সোনতলায় এসে পৌঁছায়। এ সময় প্রয়াত কামাল লোহানীর স্বজন, ভক্ত ও শুভান্যুধায়ীদের মধ্যে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। পরে স্থানীয় সংসদ সদস্য তানভীর ইমাম, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, সিরাজগঞ্জ শাখার উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী এবং সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সহ বিভিন্ন সংগঠন সহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রয়াত কামাল লোহানীর কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
কামাল লোহানীর প্রকৃত নাম আবু নাইম মোহা. মোস্তফা কামাল খান লোহানী। তিনি ১৯৩৪ সালের সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার সনতলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫২ সালে তিনি পাবনা জিলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করেন। পরে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ইতি ঘটে। পাকিস্তানবিরোধী আন্দোলনে তিনি গ্রেফতার হয়েছিলেন কয়েকবার। গ্রেফতার হয়ে কারাগারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে একই কারাকক্ষে তিনি বন্দিজীবন কাটিয়েছিলেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে কামাল লোহানী একজন শিল্পী, একজন সাংবাদিক ও একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে যুদ্ধে যোগ দেন। সে সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সংবাদ বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি বাংলাদেশ বেতারের পরিচালকের দায়িত্ব পান।
দৈনিক মিল্লাত থেকে শুরু করে আজাদ, সংবাদ, পূর্বদেশ, দৈনিক বার্তায় সাংবাদিকতা করেছেন কামাল লোহানী। সাংবাদিক ইউনিয়নের দুই দফা যুগ্ম সম্পাদক ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন স্বাধীনতার ঠিক আগে। সাংবাদিকতার জন্য ২০১৫ সালে তিনি একুশে পদকে ভূষিত হন।
এছাড়া সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী দুবার বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ছায়ানটের সম্পাদক ছিলেন পাঁচ বছর। তিনি উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটেরও উপদেষ্টা ছিলেন।