আমার ছোট মেয়ের প্রথম মিন্সট্রুয়েশন হয়েছে, ট্রাউজার রক্তে ভেজা।
ভয় পেয়ে বাবা-মার ঘরে আসছে। আমি গাড়ি রেখে পায়েপায়ে হেঁটে গলির সামনের দোকানে গেলাম। ভালোমানের ন্যাপকিন কিনলাম। ন্যাপকিন কেনার সময় মনে হচ্ছিল, আমার মেয়ের জন্য পৃথিবীর সুন্দরতম ফুল কিনে বাসায় ফিরছি।
ফুল হাতে ভাবছি, আজকের দিনটিতে কী করতে পারবো যার জন্য আমার মেয়ের মিন্সট্রুয়েশনকেন্দ্রিক ভয় ও দ্বিধা আজীবনের জন্য কেটে যাবে?
বাসায় ফিরেই নিকটাত্মীয়দের ফোন দিলাম। ঘরোয়া আয়োজন হলো। কারণ আমার মেয়ের প্রথম রজঃপ্রাপ্তি। বিষয়টাকে স্মরণীয় করা রাখা জরুরী। সহজ করা জরুরি। মিন্সট্রুয়েশন হলো পৃথিবীর একমাত্র রক্তপাত, যার অপেক্ষায় প্রতিটা নারী মাসভর অপেক্ষা করে। একমাত্র রক্তপাত, যেখানে মানুষের মৃত্যু নয় বরং নতুন প্রাণ ধারণের উপযুক্ততার প্রমাণ …
আমার পরিবারে যেহেতু মিন্সট্রুয়েশন নিয়ে ট্যাবু নেই, এই ব্যাপারটা অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দেবার ছোট্ট প্রয়াস হিসেবে আত্মীয়দের ডেকেছি। পাশাপাশি আমার মেয়েও যেন বুঝতে পারে, এটা খারাপ নয়। যেকোনো পরিস্থিতিতে মিন্সট্রুয়েশন শুরু হলে সে যেন পরিবারের, আত্মীয়দের সরাসরি বলে সাপোর্ট নিতে পারে। আত্মীয়রা যেন কখনো আমার মেয়ের মিন্সট্রুয়াল পিরিয়ডে ভিন্নভাবে রিয়েক্ট না করে। পরিবার কিংবা পরিবারের বাইরের মানুষের ক্ষেত্রেও যেন একইভাবে তাকায়।
উপরের গল্পটি আমার বেস্টফ্রেন্ডের। তার পিরিয়ডের দিন শুরু হয়েছিল উৎকণ্ঠা দিয়ে। শেষ হয়েছিল আয়োজন আর আনন্দ দিয়ে।
কনকারেন্ট চিত্র দেখুন।
ছেলের খৎনা হয়েছে। পুরুষাঙ্গের গ্ল্যান্সের প্রিপিউস কেটে ফেলা হয়েছে। রক্তারক্তি কারবার। এই আনন্দে কয়েক কোটি টাকা খরচা করে বড়সড় বিয়েবাড়ির মতো খানাপিনার আয়োজন করেছে। পুরান ঢাকার বিয়ে স্টাইলে পিক-আপে স্পিকার তুলে হাইভল্যুমে সড়কে শো-ডাউন করেছে। আত্মীয় স্বজন আসছে, বাচ্চা একটা ছেলে একহাতে লুঙ্গি তুলে, ডানহাতে টিপু সুলতানের ভারী তরবারী নিয়ে মুখ বাঁকা করে স্টেজে দাঁড়িয়ে আছে। সবাই পেটভারী করে স্টেজে এসে বলছে- গেট ওয়েল সুন। এমন পরিবারকে আপনি দেখেছেন।
তাহলে মেয়ের মিন্সট্রুয়েশন কেন ট্যাবু হয়ে গেল?
এক মেয়ের বড়মামা সিডনী থেকে গত শীতে কল করেছে, মা, তোমার জন্য কী আনবো?
মেয়ে নোটপ্যাডে বিশাল লিস্ট করে হোয়াটস অ্যাপ করেছে। এই লিস্ট করার সময় আমি নিজেও ছিলাম। লিস্টের প্রথম তিনটা উপহার ছিল এমন-
১। স্যানিটারি ন্যাপকিন।
২। ভালো ব্রা-প্যান্টি
৩। ফিমেইল ট্রাউজার
প্রোডাক্টগুলো যখন এলিফেন্টরোডের এসএ পরিবহনে আসে, আমি রিক্সা ভরে তার বাসায় পৌছে দিয়েছি।
তিনটা প্রোডাক্ট দেখে আপনার মনে যাই আসুক, আমার মনে হয়েছিল- এই পরিবারটা কত চমৎকার। এরা মিন্সট্রুয়াল হাইজিন এবং সেক্স এডুকেশন ফ্যামিলি থেকে পেয়েছে। এরচেয়ে আশীর্বাদের আর কিছু নাই দুনিয়ায়। উপরের তিনটি প্রোডাক্টের প্রথম দুটো মেয়েদের শরীরের জন্য অতীব জরুরি। উল্টোপাল্টা হলে বড়সড় রোগ পর্যন্ত হয়ে যায়। কিছু রোগ এখনো পৃথিবীতে কিওরেবল নয়।
শুধুমাত্র স্যানিটারি ন্যাপকিন নিয়ে ব্লকবাস্টার সিনেমা হয়েছে ভারতে। সবচেয়ে বেশি আয় করা, ট্যাক্স দেওয়া, সেকিউরড স্টার্ডাম নিয়েও অক্ষয় কুমার পর্যন্ত প্যাডম্যানের মতো মুভিতে লিড রোল করে। ২০১৮ সালের সেরা মুভি ছিল- প্যাডম্যান।
সুস্থ্য জীবনের জন্য সিম্পল জিনিসগুলোর পরিবর্তন সবার আগে করতে হয়। শুধুমাত্র টয়লেট থেকে এসে সাবান বা ছাই দিয়ে হাত ধোয়ার ট্রেন্ড দিয়েই বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার চিত্র বদলে গেছে। লক্ষ মৃত্যু, স্বাস্থ্যখাতে বিলিয়ন ডলার অর্থ অপচয় এখন হচ্ছে না, শুধুমাত্র সাবান-ছাই ট্রেন্ড চালু করার জন্য।
আমি দুই বছর ধরে একটা এনজিও-র হয়ে লিখছি। তাদের জন্য অতি সামান্য একটা আর্টিকেল লিখলেই তারা আমাকে পেমেন্ট করে। সেই আর্টিকেল তারা পোস্ট দেয় তাদের পেইজ থেকে, তাদের নামে পত্রিকায় যায়।
ভাবুন তো, কী লিখি যার জন্য আমার এক ঘন্টার মূল্য তারা এত বেশি দেয়?
সাতটা টপিকের মাঝে তিনটা টপিকের নাম লিখি।
১। চাইল্ড এবিউজ
২। রিপ্রোডাকটিভ হেলথ
৩। মিন্সট্রুয়াল হাইজিন।
আপনি নিজেও জানেন না, মাসিকের (মিন্সট্রুয়েশন) সময় একটিমাত্র নোংরা, ত্যানা কাপড় পরে আমাদের মায়েরা তাদের নিজেদের মিন্সট্রুয়াল হাইজিনের যত্ন নিতো। এখনো গ্রামের মায়েরা এই কাজ করছে। আপনি তো ফেসবুকে আছেন, স্ট্যাটাস পড়ছেন, আপনি ভাবুন তো, আপনার বাড়িতে শুধুমাত্র পঞ্চাশের কম বয়স্ক আপনার মা থাকেন। বাড়িতে কখনো স্যানিটারি প্যাড দেখেছেন?
দেখেননি। কারণ আপনার কিংবা আমার মা স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করেন না। পুরাতন ত্যানা কাপড় পড়ে এই সময় পাড়ি দেন।
আপনি জানেন, আপনার কিংবা আমার মা ভ্যাজাইনাল ক্যানডিডিয়াসিস, ট্রাইকোমোনাস ইনফেকশন, হেপাটাইটিস-বি কিংবা জরায়ুমুখ ক্যান্সারের রিস্কে আছে? অলরেডি তাদের এসবের একটি রোগও হয়তো আছে, আপনি জানেন না। আপনাকে বলেনি। যখন বাচামরা অবস্থায় যাবে, তখন জানবেন। সেদিন কিছু করার থাকবে না।
লজিক্যালি ভাবুন তো এবার,
আপনার কিংবা আমার মা নোংরা ত্যানা কাপড় পড়ে পিরিয়ডের সময় যত্ন নিয়েছে মানে, তাদেরও মাসিক হতো। মাসিক হতো মানে তারা ফার্টাইল। সন্তান জন্মদানের সক্ষমতা আছে। আছে বলেই আমি আজ এই স্ট্যাটাসটা লিখছি, আপনি পড়তে পারছেন।
সন্তান হবার পর আপনার আমার প্রথম কর্তব্য কী?
অন্তত তাদের উপরের পাঁচটা রোগ যেন না হয়, যেন সুস্থ্য থাকে, এজন্য কয়বার তাদের জিজ্ঞসা করেছি মিন্সট্রুয়াল হাইজিনের ব্যাপারে?
এখনকার প্রেমিকদের কেউকেউ তো প্রেমিকার ন্যাপকিন কিনে দেয়। আই সয়্যার- লাল গোলাপের চেয়েও বড় উপহার হলো প্রেমিকার জন্য কেনা স্যানিটারি ন্যাপকিন।
আমার ছোট্ট একটা স্বপ্নের কথা বলে শেষ করি।
ডাক্তার হবার পর আমি প্রথম যে অনুভূতিটা পরিবারকে নিয়ে পেয়েছিলাম, সেটা শুনলে আপনি নাক কুচকেও ফেলতে পারেন।
আমি দেখেছি, প্রস্রাব আটকে যাবার কারনে তলপেট ফুলে কত বাবা ইউরোলজি ওয়ার্ডে আসে। ক্যাথেটার করা যায় না। চেতনানাশক ব্যবহার না করেই মোটা সুই ফুটিয়ে তলপেট ফুটো করে, ক্যাথেরটার ঝুলিয়ে দিয়ে কতজনের প্রস্রাব করেয়েছি, হিসেব করিনি। পুরুষ হবারও অনেক যন্ত্রণা আছে। পুরুষের টেস্টোস্টেরন যেমন পুরুষ বানায়, এই হরমোনই আবার পুরুষের প্রস্টেট বড় করে, বেশি বয়সে প্রস্রাব আটকে দেয়, কষ্ট দেয়, প্রস্টেটে ক্যান্সার বানিয়ে ছেড়ে দেয়।
যারা আমার গল্প পড়ে মুগ্ধ হয়েছেন, তারা কী জানেন, ভারতীয় উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ কবি রবীন্দ্রনাথ শেষ বয়সে প্রস্টেট বড় হয়ে যাবার কারণে কষ্ট পেয়েছেন বারবার?
কারণ প্রস্রাব আটকে যেত।
জোড়াসাকোয় যে ঘরে তিনি জন্ম নিয়েছিলেন, সেই ঘরেই তার প্রস্টেট অপারেশন করেছিল কিংবদন্তী ডাক্তার বিধানচন্দ্র।
জানেন কী?
পেনিসিলিন নামক সবচেয়ে কমদামী এন্টিবায়োটিক বাজারে পাওয়া যায় আজকাল, সেই পেনিসিলিনের অভাবে ইনফেকশন ছড়িয়ে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ মৃত্যুবরণ করেছেন?
অথচ তিনি জমিদার ছিলেন। বিশ্বযুদ্ধের সময় ইংল্যান্ড তাকে পেনিসিলিন দেয়নি। কয়েকটা পেনিসিলিনের অভাবে বিশ্বকবি মারা গেছেন।
যখন রেডিও-টিভি-পত্রিকারা তার মৃত্যুবার্ষিকীতে তার গান বাজিয়ে উদযাপন করে তখন আমার আফসোস হয়। গানের পাশাপাশি আজ বরং একটা অনুষ্ঠান হতে পারতো যেখানে ডাক্তাররা বলতেন, রবীন্দ্রনাথ অত্যন্ত পেইনফুল মৃত্যু পেয়েছিলেন। ডাক্তাররা অনুষ্ঠানের ফাঁকে বলতে পারতো, যে পুরুষরা রবীন্দনাথের মতোই রিস্কে আছেন!
কখনো এমন হয়নি। হবে না।
আমার বাবার ক্ষেত্রেও তো এমন হতে পারে।
মাঝরাত।
প্রস্টেট বেড়ে যাবার কারণে প্রস্রাব আটকে গেছে। প্রথমে কয়েকবার ওয়াশরুমে গিয়ে তিনি প্রস্রাবের চেষ্টা করবেন। বারবার ব্যর্থ হবেন। নিষ্ঠুর কিডনি কিন্তু প্রস্রাব তৈরি থামাবে না। প্রস্রাবে ব্ল্যাডার ফুলতেই থাকবে। ব্ল্যাডারের দেয়াল স্ট্রেস পেতে পেতে পেইনের পরিমাণ তীব্র থেকে তীব্রতর করবে। যখন জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণ হবে, ব্যাথা অসহনীয় হবে, তখন বাবা আমার পরিবারের কাউকে বলবেন, বাবারে আমি পিশাপ করতে পারছি না।
আমি তখন কী করবো?
হাসপাতাল অনেক দূর। মাঝরাত হয়েছে। ট্রান্সপোর্টের সুযোগ নেই। এখন তো কোভিড প্যাশেন্ট দিয়ে ভর্তি হাসপাতালগুলো। তাকে ক্যাথেটার করিয়ে প্রস্রাব করাব নাকি হাসপাতালে নিতে গিয়ে কোভিডে আক্রান্ত করে মারা যেতে সাহায্য করবো?
ডাক্তার হিসেবে আমার কাজ হলো- ক্যাথেটার এনে তাকে নিজ হাতে ক্যাথেটারাইজেশন করা প্রস্রাব করতে সাহায্য করা।
এটা হলো জীবন। নিজের বাবার প্রাইভেট পার্টে হাত রেখেও আপনার জীবন বাঁনোর চেষ্টা করতে হবে। যদি লজ্জা পান, আপনার বাবার যদি হাইড্রোনেফ্রোসিস হয়ে যায় কিংবা মারা যায়, এই অভিশাপ ও ভুলের জন্য আপনার জান্নাতপ্রাপ্তির সুযোগও আর থাকবে না। যতই ইবাদত বন্দেগী করেন। সুযোগ ছিল, বাঁচাননি।
আমরা শিক্ষা কম নিই, শিক্ষা দিই বেশি।
কিছুদিন আগে স্যানোরার এডে যখন আপন ভাই তার বোনকে ন্যাপকিন কিনে দিয়েছে, তখন আমাদের রাস্তায় নেমে মিছিল করে মিস্টিবিতরণ করা উচিৎ ছিল। অথচ আমরা ভয়ানক পার্ভার্টদের মতো সেটাকে নিয়ে নোংরামির চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে গেছি। ভাই কীভাবে এই কাজ করবে?
স্যানোর প্যাডে তো ইয়াবা-ওয়াইন মেশানো নাই। স্রেফ ডিজপোসেবল স্টেরাইল ইনগ্রেডিয়েন্ট।
এই মানুষগুলোই আবার মায়ের সেবা-যত্নের ব্যাপার আসলে সবার আগে ভয়েস রেইজ করে।
সব থামিয়ে দিন।
বাসায় ফিরে মাকে জিজ্ঞাসা করুন, মিন্সট্রুয়াল হাইজিন জানে কী না, বোনকে আগামীমাসের ইনকাম থেকে একটা লাল গোলাপের মতো ভালোবাসা মাখা আছে, এমন একটি স্যানিটারি প্যাডের কার্টুন উপহার দিন।
মাকে হয়তো জিজ্ঞাসা করতে পারবেন না, তারচেয়ে সহজ একটা উপায় শিখিয়ে দিই।
প্রত্যেক ছয় মাসে আপনার জমানো অল্প কিছু টাকা খরচ করে মাকে নিয়ে গাইনী স্পেশালিস্টের কাছে যান। যদি লজ্জায় কিছু নাও বলতে পারেন, বলুন- তোমার রুটিন চেক-আপের জন্য নিয়ে যাচ্ছি।
আপনি সিনারিও জানেন না।
গাইনী ফাইনাল এক্সামে আমার ভাগে যে বয়স্ক মহিলা ছিলেন, যার মাথায় হাত রেখে এক্সামিনেশন করে পরীক্ষায় পাশ করে ডাক্তার হয়েছি, সেই মহিলার ছিল ইউটেরাইন প্রোল্যাপ্স। ফোর্থ গ্রেড।
ভ্যাজাইনার মুখ দিয়ে জরায়ু বের হয়ে আসছে। সেই জরায়ুতে ঘা হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই হয়তো সেখানে ক্যান্সার জন্ম নিবে।
এই মায়ের কেন এই দশা ছিল?
প্রথম প্রথম ভ্যাজাইনার মুখ দিয়ে যখন জরায়ু বের হয়ে আসে, গ্রামের নারীরা সেটাকে হাত দিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়। আবার বের হয়ে আসে। একটা সময় আর ভেতরে রাখা সম্ভব হয় না। সেখানে ঘা হয়, ব্যাথা হয়, যন্ত্রণা হয়।
এই মা নিশ্চয় তার সন্তানকে গিয়ে বলবে না, তার কী অবস্থা চলছে!
যে মা তার সন্তানকে কখনো এসব শিক্ষা দেয়নি, সেই সন্তান কীভাবে জানবে?
ভাবুন তো, যে জরায়ুর ভেতরে আপনি-আমি-দুনিয়ার প্রতিটা মানুষ নয় মাস থেকে জন্ম নিয়েছি, সেই অঙ্গটার জন্য মা প্রচন্ড কষ্টে আছে। কাউকে বলতে পারছে না।
সমস্ত লজ্জা, ট্যাবু একদিকে সরিয়ে একবার, প্লিজ একবার ভাবুন তো- এই দৃশ্যটা…আপনার মায়ের ক্ষেত্রে… আমি নিশ্চিত এই অংশ পড়ার পর আপনার চোখের কোনায় জল চলে আসছে। আপনিও মানুষ তো। মানুষ হয়েছেন বলেই, আপনার মায়ের না বলা যন্ত্রণা আপনাকে কষ্ট দিচ্ছে। আপনার চোখে জল এনেছে।
সেক্স এডুকেশন পর্ন দেখে নয়, জেনে শিখুন। ইনফরমেশন আজকাল ওপেন। ক্লিক করলেই জানা যায়। যেদিন ভাই হয়েছেন, আপনার বোনের দায়িত্ব আপনার। বাবা-মা যদি লজ্জা পায়, বোন কাকে গিয়ে বলবে?
নিজে বোনের কাছে না যেতে পারলে রাস্তায় ইডিয়ট লোকজন আপনার বোনকে দেখে হাসবে। এই দৃশ্য আপনি নিতে পারবেন না।
যেদিন স্বামী হবেন, সেদিন আপনার স্ত্রীর মিন্সট্রুয়াল হাইজিনের দিকে আপনাকে খেয়াল রাখতেই হবে।
যেদিন মেয়ের বাবা হবেন, সেদিন ন্যাপকিনের মোড়কের আড়ালে প্রথম গোলাপটা যেন আপনিই আপনার মেয়েকে দিতে পারেন। সাত সাগর পেরিয়ে, একশো একটা লাল গোলাপ সংগ্রহের সুররিয়েল অনুভূতি সাহিত্যে আছে, বাস্তবে নাই।
শেষ হোক আজকের কথোপকথন।
আপনার জন্মের সময় আপনার বাবা শুধুমাত্র শুক্রাণুর মাধ্যমে ২৩ টা ক্রোমোজোম দিয়েছে কিন্তু আপনার দেহের রক্ত-মাংস-ব্রেইন-হরমোন সব আপনার মায়ের। আপনার দেহের প্রতিটা কোষ আপনার মায়ের।
সেই মায়ের, মায়ের মতোই বোনের ব্যাপারে গ্যাপ রাখবেন না।
তাদের যত্ন করুন। আড়ালে অবডালে রোগ জন্মাতে দিবেন না।
সেন্সটিভ ইস্যু হলে সবার আগে এগিয়ে যান। বাইরের লোকের হাসি থামানোর আগে নিজের কাজটা করুন। দেখবেন স্যানোরার স্যানিটারি ন্যাপকিনের আড়ালেও একশ একটা লাল পদ্ম ফুটে আছে।
ট্যাবু ভাঙ্গুন!!!
সবাইকে ভালোবাসা…লাল পদ্মের…
#Not_a_shame