এশিয়া-প্যাসিফিক ক্যাটাগরিতে এই সম্মাননা।ভূমি মন্ত্রণালয়ের এই অর্জন বাংলাদেশেরই সম্মান নিঃসন্দেহে।সম্মাননা অর্জনের জন্য যেসকল শর্ত জুড়ে দেওয়া-ভূমি মন্ত্রণালয় নিশ্চয়ই তার সবগুলোর কোটা পূর্ণ করেছে।
এঅঞ্চলে অসংখ্য দেশের পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ বা পাবলিক,নন-পাবলিক প্রতিষ্ঠানের জনসেবামূলক ইন্সটিটিউশনের প্রফেশনালিজম,পাবলিক সার্ভেন্ট ইমেজ এবং গুড গভর্ন্যান্স গঠনে পাবলিক সার্ভিসিং ইতিবৃত্ত ২০২০ পর্যালোচনায় বাংলাদেশের ভূমি মন্ত্রণালয় অগ্রগণ্য।ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃপক্ষ সেরকম একটি কভার লেটার প্রস্তুত করেছে যা জাতিসংঘের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে।জনসেবার নিরলস প্রচেষ্টা ও তার ইতিবাচক কর্মপ্রকৃতি বর্ণিত ছিল আমাদের বিশ্বাস।
ডিঅ্যাক্টিভিটি,স্বচ্ছতা,সাফল্য,শ্রম আর মেধা বিকাশের সর্বোচ্চ খাত ভূমি মন্ত্রণালয়- সুন্দর ও মোহনীয় একটি প্রতিবেদনে বাংলাদেশের পাবলিক সার্ভিসিং-এর নিরবিচ্ছিন্ন মানবিক আচরণ ও বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছে জাতিসংঘ বরাবর।ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী বিষয়টিকে সাম্মানিক অর্জনের তালিকাভুক্তিকরণে স্বকীয় কর্মপ্রকৃতিকে নিয়ে গর্বের সীমা অতিক্রম করেছেন আশা করি।
প্রথমেই আমার চোখ ভড়কে ওঠে।ভূমি মন্ত্রণালয়-দেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসন।টিআইবি আমাদের প্রতিবছর যে রিপোর্ট দেয়-ওতে আমরা দেখি পুলিশ আর ভূমি;যাদের সনে কথা বলতেও আপনার পকেট ভরা থাকা চাই।দেশের শীর্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসন হিসেবে ভূমি আর পুলিশই থাকে প্রথম-দ্বিতীয় সম্মানের আসনে।দুটো প্রশাসনের মধ্যে ভূমি মন্ত্রণালয় যেহেতু আলোচ্য তাই ভূমি মন্ত্রণালয় ও তার অধীন দপ্তরগুলোর বেহালদশাটা ক্ষুদ্র আঁচড়ে দুটো উদাহরণে স্পষ্ট হওয়া চাই।
ঘটনা ভূমি:(ক)
জমির মালিকানা সন্ধানের অভিপ্রায়ে কাবিলা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে (কুমিল্লা) গেলে প্রথমে যা দেখি তা হলো-টাকা ছাড়া কেউ আপনাকে খতিয়ানের তথ্য দেবে না।ব্যাপারটা এমন যে, কাজ করলে করবেন- না করলে বিদায় হোন।অন্য কাস্টমারকে সুযোগ দিন-আমাদের পকেট গরম রাখার সুযোগ দিন।অগত্যা উপায় না পেয়ে অনেক সাধারণজন ধার দেনার মাধ্যমে খতিয়ান বের করতে বাধ্য হোন।খতিয়ান প্রতি আপনাকে পরিশোধ করতে হবে ৭০০-১০০০ টাকা।সিএস এবং আরএস খতিয়ানের একটা সুবিধা হচ্ছে দুটোরই খতিয়ান নাম্বার একই থাকে।আপনি সিএস-এর যতগুলো খতিয়ান পাবেন,আরএসও তাই।বিপত্তিটা হচ্ছে- আরএস বা সিএস-এর একটি হতে বিএস খতিয়ানে ছয় থেকে সাতটি খতিয়ানের সংযোজনে।একটি সিএস-এর জন্য আপনি ৮০০টাকা দিলে;ছয়টি খতিয়ানের জন্য আপনার পেমেন্ট হবে ৪,৮০০টাকা।সিএস এবং আরএস খতিয়ান একসাথে চাইলে আপনাকে সেই টাকাটা দ্বিগুণ গুণতে হবে।৯,৬০০টাকা দরিদ্র পরিবারের পক্ষে বহন কষ্টসাধ্য কিনা আপনাদেরই বিবেচ্য।প্রশ্ন করতে পারেন-যারা এতগুলো খতিয়ানের দাবীদার তারা গরিব হতে পারে না।বলে রাখা ভালো-বেশি খতিয়ানের অর্থ বেশি জমির মালিকানা নয়।আর পিতৃপুরুষের জমি যদি ভোগদখলে না থাকে বহুদিন পর নিশ্চয়ই আপনি ধনীটি থাকবেন না।
বলাবাহুল্য,একটি আরএস খতিয়ানের ন্যূনতম পাঁচটি বিএস খতিয়ান থাকলে ছয়টির জন্য খতিয়ান হবে ৩০টি।প্রতিটি বিএস খতিয়ানের জন্য আপনাকে উপরি হিসেবে কিছুটা মওকুফের পরও যদি ন্যূনতম ৭০০ টাকা খতিয়ানপ্রতি পরিশোধ করতে হয় তবে আপনি ভূমি কর্তৃপক্ষকে আরও দেওয়া চাই ২১,০০০ টাকা।সর্বমোট খতিয়ানেই আপনাকে দেওয়া চাই ৩০,৬০০।এ টাকা বাংলাদেশের দরিদ্র পরিবারের পক্ষে বহনে প্রতিবন্ধকতাটা কোথায় সেটা আপনাদের বিবেচনা।
ভূমি(খ):
খতিয়ান পেলেই আপনি জমির মালিকানা দাবী করতে পারবেন না।আপনার চাই মালিকানা হস্তান্তর বিষয়ক দলিলপত্র।আপনারা নিশ্চয়ই জানেন-১৮৮৮খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার সিএস খতিয়ান বিষয়ক নির্দেশনা জারির পর সিএস খতিয়ান প্রস্তুতকরণ সম্পন্ন হয় যা ব্রিটিশদের ভারতবর্ষে ক্ষমতা আরোহণের প্রায় শেষ সময় পর্যন্ত কার্যকর ছিল।১৯৫৬-এর দিকে এসএ খতিয়ান ত্রুটিপূর্ণ থাকায় আজকাল এই খতিয়ানের গ্রহণযোগ্যতা হ্রাস পেয়েছে।আপনি যদি আপনার খতিয়ানের তথ্য দিয়ে মোটামুটি ১৯৫০ থেকে ১৯৯৫ পর্যন্ত দলিলপত্রাদি তল্লাশি দেন আপনাকে কমপক্ষে প্রতি বছরের জন্য দলিল অনুসন্ধানকারীকে সালপ্রতি দেওয়া চাই ১০০টাকা।সে হিসেবে ৩০,৬০০-এর সাথে অতিরিক্ত আপনাকে যোগ করতে হবে ৪,৫০০টাকা।৩৫,১০০টাকা বহন আমাদের গুটি কয়েক পরিবার ব্যতিরেক অসম্ভব।যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায় তাদের কথা না হয় আমরা বাদই দিলাম।তাদের পূর্বপুরুষের জমি উদ্ধার তখন স্বপ্নবিলাসী মতবাদ বৈ ভিন্ন নহে।পাবলিক সার্ভিসিং-প্রক্রিয়ার জন্য রাষ্ট্র আপনাকে নিয়োগের নিমিত্তে মাসিক বেতন প্রদানের পরও জনসাধারণের পক্ষে এই টাকাটা কেন দেওয়া হবে সেটা আমাদের মহামান্য রাষ্ট্রের কাছে প্রশ্ন।খতিয়ানপ্রতি ২০০টাকা চার্জ না হয় রাষ্ট্রের যাবতীয় খরচাপাতির ব্যয় নির্বাহ কিন্তু উপরি হিসেবে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন কর্তাবাবুরা আমাদের জিম্মি করে যে টাকাগুলো হাতিয়ে নেন-রাষ্ট্রের জনগণ হিসেবে আমরা কার কাছে অধিকার বঞ্চনা ও উৎপীড়ন হতে মুক্তির দিশা পাবো সেটা মহামান্য রাষ্ট্রের কাছে আমাদের প্রশ্ন।তখন জাতিসংঘের সম্মাননা আমাদের আশান্বিত করতে পারে না।