1. asifiqballimited@gmail.com : Asif Iqbal : Asif Iqbal
  2. Kamrulsohan55@gmail.com : কামরুল সোহান : কামরুল সোহান
  3. khoshbashbarta@gmail.com : ইউনুছ খান : ইউনুছ খান
সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:৫৯ অপরাহ্ন
খোশবাস বার্তা

“মুক্তি সংগ্রামের পথে “ – ওমর আরিফ

ওমর আরিফ | শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
  • প্রকাশিতঃ বৃহস্পতিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২১
  • ২২৮৫ বার পঠিত

সবুজের সমারোহে এই বাংলা,  কত অপরূপ দৃশ্য !পাখিরা  গান গায়, রাখাল বাঁশি বাজায়,কৃষক মাঠে সোনা ফলায়, এদিকে ছেলেরা মেতে ওঠে খেলাধুলায়।  নদী, মাঠ-ঘাট সবকিছুতেই কচি-কাঁচার মেলা।  মাঠ পেরিয়ে বন আসে, সবখানেতেই দামালছেলেরা হাসে।

সিরাজ! এমনই এক অদম্য কিশোরের নাম।
 সবে মাত্র দশম শ্রেণীতে পা রেখেছে।  সতের বছর বয়সী এই কিশোরের মন যেন বইয়ে নয়, চরম দুরন্তপনায়। বন্ধু-বান্ধবের সাথে ঘুরে বেড়ানো,খেলাধুলায় মেতে  থাকা তার নিত্যদিনকার সঙ্গী।
 সময়টা তখন মার্চ মাস, ১৯৭১। ফাল্গুনের  রোদেলা সকালে পাড়ার ছেলেরা জেগেছে- মহা উৎসবে। হই-হুল্লোর আর উল্লাসে ছেলেরা মেতেছে আপন মনে। হঠাৎ প্রচন্ড আওয়াজে  আকাশে ডানা মেলে দানবের মত উড়ে আসা  এক ঝাঁক জঙ্গিবিমান থেকে শুরু হয় ‘বুলেট বর্ষণ’। সবাই এদিক ওদিক দৌড়ে পালিয়ে যায়।মুর্হুতেই  ফাঁকা হয়ে যায় মাঠ-ঘাট, পথ-প্রান্তর।
‘সিরাজ ‘ দৌড়ে এসে জিজ্ঞেস করে,
 মা! আকাশে এত বিমান আসলো কই থেকে?  মা ভীত কন্ঠে জবাব দেয়, বাবারে! এরা হইল পাকবাহিনী, ওরা আমাগো মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়,কাইড়া নিতে চায় আমাগো স্বাধীনতা, তারা আমাগোরে বাঁচতে দিবনারে   বাবা!
 কেন মা? আমরা আমাগো দেশে থাকমু, আমাগো ভাষায় আমরা কথা কমু, জীবন থাকতে কোনদিনই তা হইতে দিমু না। সাহসী কন্ঠ সিরাজের প্রতিবাদ ধ্বনি শুনে মায়ের চোখ যেন চমকিয়ে ওঠে।
সিরাজ বলে, মা কিছুদিন আগে ‘বাকের` চাচার রেডিওতে “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের“ বক্তব্য শুনেছি। তিনি বলছিলেন-
“যার যা কিছু আছে সে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকুন।এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।“
তাইলে মা বঙ্গবন্ধু এই পাকবাহিনীর বিরুদ্ধেই আমাগোরে প্রস্তুতি নিতে কইছ,  তাইনা মা? হুম, শেখ সাবইতো আমাগো নেতা, তাছাড়া মাওলানা ভাসানী ও নাকি সংগ্রাম করতেছে। তোর বাপ কইছে, বাজারে বলাবলি হইছে ঢাকায় নাকি যুদ্ধ শুরু হইছে এবং আমাগো ছেলেরাও নাকি মুক্তিবাহিনী গঠন করছে। সত্যিই! তাইলে তো ভালই হইছে। সিরাজ মনে মনে ভাবছে সেও যুদ্ধ করবে হানাদার পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে। যুদ্ধ করে দেশটাকে স্বাধীন করবে। এদিকে মা দরদ ভরা কন্ঠে আকুতি জানায় –
        বাবারে! তুই আমার কলিজার ধন, দেশের যে অবস্থা তুই আজ থেইক্কা আর বাহিরে বেশি ঘুরাঘুরি করিস না।
সিরাজ, আত্মবিশ্বাসী  কন্ঠে বলে -তুমি চিন্তা কইরো না মা! আমাগো কিছুই হইব না ইনশাআল্লাহ।
 কিছুদিন পর খবর বেরিয়েছে বাজারে  মিলিটারি বাহিনী আসছে। যাকে যেমনে পারছে তেমনি খুন করছে, দোকানপাটে আগুন লাগাচ্ছে।  এ খবর শুনে গ্রামের লোকজন ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে, মেয়েরা আশ্রয় নিয়েছে ফসলি মাঠের বুক চিরে বয়ে যাওয়া খালের আড়ালে। এ দৃশ্য দেখে সিরাজের শিরা-উপশিরায়  যেন রক্তের স্রোত ধারা বয়ে চলছে। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে শপথ করে, আমাগো দেশ থেকে এই জানোয়ারগুলোকে তাড়াইয়া দিমু।  গ্রামে পাকবাহিনীর হামলার পরে স্কুল-কলেজ সব বন্ধ হয়ে গেছে। পড়ুয়া  জোয়ান ছেলেদের রাজাকাররা মিলিটারিদের হাতে ধরাইয়া দেয়।তাই সিরাজের বুবুজান তার বইগুলো ধানের গোলার ভিতর লুকাইয়া রাখে। কড়া পাহারায় মা নজরদারি করছে সিরাজকে যাতে সে বাহিরে না যেতে পারে। একদিকে মায়ের কঠোর নজরদারি, অন্যদিকে দেশের প্রতি সিরাজের কঠিন ভালোবাসায় উন্মত্ত  হয়ে আছে তার দেহ-মন। অবশেষে সে সিদ্ধান্ত নিল কাউকে না জানিয়ে সে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিবে। এলাকার কিছু বড় ভাইয়েরাও যোগ  দিবে মুক্তিযুদ্ধে।
 একদিন সিরাজের বুবু দেখে বাড়ির  পাশের একটি দরগায় সিরাজ সালাম করছে। এর পর থেকে আর পাওয়া যাচ্ছে না তাকে। এদিকে সিরাজকে না পেয়ে তার ‘মা’ পাগল প্রায়। বুবুর মুখে দরগায় সালামের কথা শুনে,  মা বিলাপ করছে  আর বলছে –”আমার সিরাজ  মুক্তিবাহিনীতে  গেছ,  আমার সিরাজ যুদ্ধে গেছে “।
প্রতিদিনই মা দাঁড়িয়ে থাকে গ্রামের মেঠো পথের ধারে। আর আচঁলে লুকিয়ে  থাকা মায়ের প্রতিক্ষিত দৃষ্টি যেন শেষ হয়না। শেষ হয় না  মায়ের সেই আকুতি – “কবে আসবে বাবা? কবে আসবে আমার ‘সিরাজ `।“
এভাবেই দেশমাতৃকার টানে শত শত সিরাজ মায়ের বাধঁন ছিড়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে – ‘মুক্তি সংগ্রামের পথে` ।
খোশবাস বার্তা

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
corona safety
সত্বাধিকার © খোশবাস বার্তা ২০১৬- ২০২৪
ডেভেলপ করেছেন : TechverseIT
themesbazar_khos5417