ইসলামি সংস্কৃতি বিনির্মানেঃ
বাংলাদেশের ইসলামী সংস্কৃতির নতুন সংযোজন ” পবিত্র জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদুন্নবী (দঃ)”। ১৯৭৪ সালে হযরত সৈয়দ তৈয়্যব শাহ রাঃ নির্দেশ প্রদান করেন। চট্টগ্রামে জশনে জুলুস করার জন্য যা পরবর্তীতে রাজধানী ঢাকা, জেলা-সদর এমন কি প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত অন্যান্য তরীকা ও সংস্থা কর্তৃক ও অনুসৃত হতে।বাংলাদেশে অত্যন্ত জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। ৯ ই রবিউল আওয়াল ঢাকায়। আর ১২ই রবিউল আউয়াল চট্রগ্রামে লক্ষ লক্ষ মানুষ অংশগ্রহণ করে। যা পৃথিবীর বৃহত্তম ” জশনে জুলুস হিসেবে গণ্য। বর্তমানে জশনে জুলুস আশেক রাসুলদের মিলনমেলায় পরিণত হিয়েছে। মিশির আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের শায়খগণ তুরস্ক, ভারত,পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা সহ বিভিন্নদেশের ইসলামিক স্কলারগণ জামেয়ার জশনে জুলুস বিভিন্ন অনলাইনে মিডিয়াতে দেখে জামেয়া পরিদর্শনে ভুয়ুসী প্রশংসা করেন।
কাদেরিয়া তরীকার প্রচার প্রসারেঃ
হযরত বড়পীর গাউসুল আযম আব্দুল কাদের জিলানী রাঃ অলীকুল সম্রাট এবং তার প্রতিষ্ঠিত ” সিলসিলায়ে আলীয়া কাদেরিয়া সূফী তরীকা সমগ্র মুসলিম বিশ্বের প্রভাবশালী তরীকা। বাংলাদেশ, ভারত,পাকিস্তান, বার্মা মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে কাদেরিয়া তরিকার প্রচার ও প্রসারে তাহার অবদান অতুলনীয়। কাদেরিয়া তরীকার মাশায়েখগণের ওয়াজিফা সমূহ সংকলন করে’আওরাদুল কাদেরিয়াতুর রহমানিয়া নামে ছাপানোর ব্যবস্থা করেন। বাংলাদেশে তার লক্ষ লক্ষ ভক্ত মুরীদ। এইসব ভক্ত মুরীদদের মাধ্যমে তিনি গাউস পাক রাঃ প্রবর্তিত সিলসিলার কর্মকাণ্ড, খতমে গাউসিয়া,গেয়ারভী শরীফ ইত্যাদি ঘরে ঘরে, দোকানে,অফিসে পৌঁছে দিয়েছে যার ফলে বাংলাদেশে কাদেরিয়া তরীকার প্রচার প্রসার হয়
আলা হযরতের চিন্তাধারার প্রচারঃ
চতুর্দশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ইমামে আলা হযরত ইমাম আহমদ রেযা রহঃ এর যুগান্তকারী চিন্তাধারা নিয়ে বর্তমানে বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা চলছে। তিনি সহস্রাধিক কিতাব লিখেছেন। হযরত সৈয়দ তৈয়ব শাহ রহঃ সিলসিলার যাবতীয় কর্মকান্ডে কালামে রেযা ও সালামকে এমনভাবে তুলে ধরেন যা পরবর্তীতে সুন্নী মুসলমানদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তাঁরই অনুপ্রেরণায় তাঁরই আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে লেখক, গবেষক, অনুবাদক ইতিমধ্যে শতাধিক গ্রন্থপ্রণয়ন, অনুবাদ কর্ম, প্রবন্ধ লিখে প্রকাশনা জগতকে উজ্জীবিত করেন।
সংগঠনের উপর গুরুত্বঃ
বাংলাদেশে হুজুরের সর্বশেষ সফর ছিলো ১৯৮৬ সালে। এই বছর হুজুর স্বদেশে ফেরার পর আনজুমান এ -রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টকে নির্দেশ দেন গাউসিয়া কমিটি গঠনের। বর্তমানে গাউসিয়া কমিটির মাধ্যমে শরীয়ত- ত্বরিকত, সামাজিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে। করোনাকালে যখন আপনজন রোগী থেকে দূরে থাকছে, ঠিক তখনই গাউসিয়া কমিটির স্বেচ্ছাসেবীরা রোগীদের জন্য আইসোলেশান, অক্সিজেন, এম্বুলেন্স দিয়ে সহায়তা করে যাচ্ছে। করোনায় মৃতের দাফন-কাপন এবং রোগীদের সেবা কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়ক এডভোকেট মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার সাহেব তার ফেইসবুক আইডিতে লিখেন ০৩/০৮/২০২০ তারিখ পর্যন্ত সারাদেশে ৭৫৮ জনের দাফন কাফন করেছেন। আর অমুসলিমদের নিজ নিজ ধর্ম অনুযায়ী সৎকারের ব্যবস্থা করেন৷
আজানের পূর্বে ও পরে সালাত-সালামঃ
আজানের পূর্বে ও পরে সালাত-সালাম পাঠকরা এক পূণ্যময় আমল। আলেমগণ প্রত্যেকেই যে কোন বয়ানের খুতবা-কিংবা কিতাব লিখার খুতবাতে দুরুদ শরীফ তথা সালাত-সালাম দিয়ে থাকেন৷ কিন্তু আজান দেওয়া একিটা মহৎ কাজ। এই কাজে অনেকে সালাত-সালাম দেয়না। যদি ও আজ হতে দীর্ঘ আটশত বছির পূর্বে আরবসহ সমগ্র মুসলিম বিশ্বে আজানের পূর্বে ও পরে সালাত-সালাম পাঠের বরকতময় প্রথা চালু ছিলো৷ মিশর,ইরাক,ইরান, সিরিয়া, তুরস্ক, লেবানন, ফিলিস্তিন, ভারত, পাকিস্তান সহ মধগ প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে এই প্রথা চালু আছে৷ শতাব্দীর অন্যতম সংস্কার আলহাজ্ব হাফেজ ক্বারী সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়ব শাহ রহঃ এর প্রচেষ্টায় বাংলাদেশে এই প্রথা চালু হয়।
দ্বীন মাযহাব মিল্লাতে খেদমত করে হুজুর ক্বেবলা হযরত সৈয়দ তৈয়্যব শাহ রহঃ ১৪১৪ হিজরী ১৫ই জিলহজ ১৯৯৩ ইংরেজির ৭ই জুন সোমবার ওফাত বরণ করেন।
তথ্যসূত্রঃ
১। শাজরা শরীফ-দরবারে আলিয়া কাদেরিয়া
২। সিরিকোট থেকে রেঙ্গুন কৃতঃ মোছাহেব উদ্দীন বখতিয়ার
৩। সুন্নীয়তের পঞ্চরত্ন- অধ্যক্ষ মুহাম্মদ বদিউল আলম রিজভী
৪। মাসিক তরজুমান।
৫। দৈনিক আজাদী
৬। ইউকিপিডিয়া
৭। The islamic universities studies (part-A) vol-8, no- 1 dec -1999 ডক্টর আবদুল অদুদ