1. asifiqballimited@gmail.com : Asif Iqbal : Asif Iqbal
  2. Kamrulsohan55@gmail.com : কামরুল সোহান : কামরুল সোহান
  3. khoshbashbarta@gmail.com : ইউনুছ খান : ইউনুছ খান
রবিবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৬ অপরাহ্ন
খোশবাস বার্তা

দ্বীন, মাযহাব, মিল্লাতের খেদমতে আল্লামা হাফেজে ক্বারী সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ (রহঃ)’র অবদান

মুহাম্মদ মাছুম বিল্লাহ | জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া | চট্টগ্রাম
  • প্রকাশিতঃ সোমবার, ১০ আগস্ট, ২০২০
  • ২৪৫০ বার পঠিত
বাংলাদেশে শরীয়তের বাগানকে পল্লবিত এবং কাদেরিয়া তরীকার ক্ষেত্রকে প্রচার ও প্রসারে যে সকল মনীষীর অবদান অনস্বীকার্য তাদের মধ্যে সর্বাগ্রে ছিলেন আওলাদে রাসুল (দঃ) আল্লামা হাফেজ ক্বারী সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ (রহঃ)
হযরত সৈয়দ তৈয়্যব শাহ(রহঃ) হিজরী ১৩৩৬ মোতাবেক ১৯১৬ সালে পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের বর্তমান হাজারা জেলার সিরিকোট জেলার শেতালু শরীফে জন্মগ্রহণ করেন। তাহার পিতা প্রখ্যাত অলিয়ে কামেল হযরত হাফেজ ক্বারী সৈয়দ আহমদ শাহ সিরিকোটি(রহঃ)। তিনি রাসুলে পাক (দঃ) এর একজন ৪০তম অধঃস্তন পুরুষ।
শিশুকাল থেকে হযরত সৈয়দ তৈয়ব শাহ(রহঃ) এর আধ্যাত্মিক আচরণ প্রকাশ পায়। অন্যান্য শিশুদের তুলনায় তিনি ছিলেন আলাদা। এই জন্যই উনার পিতা বলেছিলেন,
” তৈয়ব মাদারজাদ অলি হ্যায়”
পিতা হযরত সৈয়দ আহমদ শাহ (রহঃ) ও মাতা সৈয়্যদা খানমের কাছেই পারিবারিক ঐতিহ্য অনুযায়ী বুনিয়াদি শিক্ষা অর্জন করেন। অল্প বয়সে কুরআন শরীফ মুখস্থ হেফজ করেন। আব্বা হুজুরের ততত্ত্বাবধানে পরিচালিত হরিপুর রহমানিয়া মাদ্রাসা থেকে কুরআন হাদিসের প্রাতিষ্ঠানিক ইলম হাসিল করেন। কুরআন সুন্নাহর উচ্চতর দরস নিতে তৎকালীন শীর্ষস্থানীয় আলেমেদ্বীন আল্লামা সরদার আহমদ লয়ানপুরী (রহঃ) এর নিকট কিছু সময় কাটান।
দ্বীনী শিক্ষা বিস্তারে অবদানঃ
শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড শিক্ষাই জাতির উন্নতি ও অগ্রগতির সোপান। দ্বীনী শিক্ষার প্রচার প্রসারে আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ(রহঃ) তাহার আব্বা ও দাদা হুজুর কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসা গুলোতে অতুলনীয় উন্নতি সাধন করেছেন। তিনি যেখানে সফর করেছেন সেখানেই মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি ঢাকাস্থ কাদেরিয়া তৈয়্যবিয়া কামিল মাদ্রাসা সহ বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে শত শত দ্বীনী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন।
ইসলামী প্রকাশনায় অবদানঃ
সুন্নীয়তের আকীদা ও আমল সংক্রান্ত লেখাগুলোকে নিয়মিত প্রকাশ করার জন্য ১৯৭৬ সালের ১৬ই ডিসেম্বর চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত আনজুমানের সভায় তিনি নিয়মিত পত্রিকা প্রকাশনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা দেন। যা ১৯৭৭ সাল থেকে কার্যকর হচ্ছে। তরজুমান সম্পর্কে হুজুর ক্বেবলা (রহঃ) বলেন, ” ইয়ে তরজুমান বাতিল ফেরক্বো-কে লিয়ে মউত হ্যায়” অর্থাৎ এই তরজুমান ভ্রান্তদল গুলোর জন্য মৃত্যু। বর্তমানে তরজুমান সুন্নী জামাতের অন্যতম মুখপাত্র হিসেবে দেশে-বিদেশে পাঠকদের চাহিদা পূরণ করে দিচ্ছে। ১৯৮৬ সাল থেকে স্বদেশে ” আনোয়ারে মুস্তফা’ নামে ষান্মাসিক পত্রিকা বের হচ্ছে তার নির্দেশে।হযরত খাজা আবদুর রহমান চৌহরভী(রহঃ) এর রচিত এবং তাহার আব্বা সিরিকোটি (রহঃ) কর্তৃক প্রকাশিত ৩০ পারা দরুদ গ্রন্থ ” মাজমুয়ায়ে সালাওয়াতে রাসূল (দঃ) ” এর বিভিন্ন সংস্করণ প্রকাশ ছাড়া ও দুর্বোধ্য আরবি গ্রন্থের উর্দু অনুবাদ নিজ তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন করেন। সিলসিলায়ে আলীয়া ক্বাদেরিয়ার মাশায়েখগণ দৈনন্দিন ওয়াজিফা সমূহ সংকলন করে” আওরাদুল কাদেরিয়াতুর রহমানিয়া” নামে ছাপানোর ব্যবস্থা করেন। তাহার নূরানী ভাষণগুলো এতো গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ ছিলো যে, যে কারণে শব্দ ধারণযন্ত্র অডিও ভিডিও এর সাহায্যে এর অনেক ত্বকরীর সংরক্ষিত হয়ে” নূরানী তক্বরীর” পুস্তিকাকারে প্রকাশিত হয়েছে। বিভিন্ন মাসয়ালা মাসায়েল এবং বিতর্কিত আকীদা ভিত্তিক বিষয়গুলোর আলোকে তার নির্দেশে এবং অনুপ্রেরণায় অসংখ্য বই পুস্তক ও ম্যাগাজিন সাময়িকী বের হয়েছে। যা বাংলাভাষায় ইসলামী সাহিত্যকে ঋণী করেছে।

ইসলামি সংস্কৃতি বিনির্মানেঃ
বাংলাদেশের ইসলামী সংস্কৃতির নতুন সংযোজন ” পবিত্র জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদুন্নবী (দঃ)”।  ১৯৭৪ সালে হযরত সৈয়দ তৈয়্যব শাহ রাঃ নির্দেশ প্রদান করেন। চট্টগ্রামে জশনে জুলুস করার জন্য যা পরবর্তীতে রাজধানী ঢাকা, জেলা-সদর এমন কি প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত অন্যান্য তরীকা ও সংস্থা কর্তৃক ও অনুসৃত হতে।বাংলাদেশে অত্যন্ত জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। ৯ ই রবিউল আওয়াল ঢাকায়। আর ১২ই রবিউল আউয়াল চট্রগ্রামে লক্ষ লক্ষ মানুষ অংশগ্রহণ করে। যা পৃথিবীর বৃহত্তম ” জশনে জুলুস হিসেবে গণ্য। বর্তমানে জশনে জুলুস আশেক রাসুলদের মিলনমেলায় পরিণত হিয়েছে। মিশির আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের শায়খগণ তুরস্ক, ভার‍ত,পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা সহ বিভিন্নদেশের ইসলামিক স্কলারগণ জামেয়ার জশনে জুলুস বিভিন্ন অনলাইনে মিডিয়াতে দেখে জামেয়া পরিদর্শনে ভুয়ুসী প্রশংসা করেন।

কাদেরিয়া তরীকার প্রচার প্রসারেঃ
হযরত বড়পীর গাউসুল আযম আব্দুল কাদের জিলানী রাঃ অলীকুল সম্রাট এবং তার প্রতিষ্ঠিত ” সিলসিলায়ে আলীয়া কাদেরিয়া সূফী তরীকা সমগ্র মুসলিম বিশ্বের প্রভাবশালী তরীকা। বাংলাদেশ, ভারত,পাকিস্তান, বার্মা মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে কাদেরিয়া তরিকার প্রচার ও প্রসারে তাহার অবদান অতুলনীয়। কাদেরিয়া তরীকার মাশায়েখগণের ওয়াজিফা সমূহ সংকলন করে’আওরাদুল কাদেরিয়াতুর রহমানিয়া নামে ছাপানোর ব্যবস্থা করেন। বাংলাদেশে তার লক্ষ লক্ষ ভক্ত মুরীদ। এইসব ভক্ত মুরীদদের মাধ্যমে তিনি গাউস পাক রাঃ প্রবর্তিত সিলসিলার কর্মকাণ্ড, খতমে গাউসিয়া,গেয়ারভী শরীফ ইত্যাদি ঘরে ঘরে, দোকানে,অফিসে পৌঁছে দিয়েছে যার ফলে বাংলাদেশে কাদেরিয়া তরীকার প্রচার প্রসার হয়

আলা হযরতের চিন্তাধারার প্রচারঃ

চতুর্দশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ইমামে আলা হযরত ইমাম আহমদ রেযা রহঃ এর যুগান্তকারী চিন্তাধারা নিয়ে বর্তমানে বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা চলছে। তিনি সহস্রাধিক কিতাব লিখেছেন। হযরত সৈয়দ তৈয়ব শাহ রহঃ সিলসিলার যাবতীয় কর্মকান্ডে কালামে রেযা ও সালামকে এমনভাবে তুলে ধরেন যা পরবর্তীতে সুন্নী মুসলমানদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তাঁরই অনুপ্রেরণায় তাঁরই আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে লেখক, গবেষক, অনুবাদক ইতিমধ্যে শতাধিক গ্রন্থপ্রণয়ন, অনুবাদ কর্ম, প্রবন্ধ লিখে প্রকাশনা জগতকে উজ্জীবিত করেন।

সংগঠনের উপর গুরুত্বঃ

বাংলাদেশে হুজুরের সর্বশেষ সফর ছিলো ১৯৮৬ সালে। এই বছর হুজুর স্বদেশে ফেরার পর আনজুমান এ -রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টকে নির্দেশ দেন গাউসিয়া কমিটি গঠনের। বর্তমানে গাউসিয়া কমিটির মাধ্যমে শরীয়ত- ত্বরিকত, সামাজিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে। করোনাকালে যখন আপনজন রোগী থেকে দূরে থাকছে, ঠিক তখনই গাউসিয়া কমিটির স্বেচ্ছাসেবীরা রোগীদের জন্য আইসোলেশান, অক্সিজেন, এম্বুলেন্স দিয়ে সহায়তা করে যাচ্ছে। করোনায় মৃতের দাফন-কাপন এবং রোগীদের সেবা কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়ক এডভোকেট মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার সাহেব তার ফেইসবুক আইডিতে লিখেন ০৩/০৮/২০২০ তারিখ পর্যন্ত সারাদেশে ৭৫৮ জনের দাফন কাফন করেছেন। আর অমুসলিমদের নিজ নিজ ধর্ম অনুযায়ী সৎকারের ব্যবস্থা করেন৷

আজানের পূর্বে ও পরে সালাত-সালামঃ

আজানের পূর্বে ও পরে সালাত-সালাম পাঠকরা এক পূণ্যময় আমল। আলেমগণ প্রত্যেকেই যে কোন বয়ানের খুতবা-কিংবা কিতাব লিখার খুতবাতে দুরুদ শরীফ তথা সালাত-সালাম দিয়ে থাকেন৷ কিন্তু আজান দেওয়া একিটা মহৎ কাজ। এই কাজে অনেকে সালাত-সালাম দেয়না। যদি ও আজ হতে দীর্ঘ আটশত বছির পূর্বে আরবসহ সমগ্র মুসলিম বিশ্বে আজানের পূর্বে ও পরে সালাত-সালাম পাঠের বরকতময় প্রথা চালু ছিলো৷ মিশর,ইরাক,ইরান, সিরিয়া, তুরস্ক, লেবানন,  ফিলিস্তিন, ভারত, পাকিস্তান সহ মধগ প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে এই প্রথা চালু আছে৷ শতাব্দীর অন্যতম সংস্কার আলহাজ্ব হাফেজ ক্বারী সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়ব শাহ রহঃ এর প্রচেষ্টায় বাংলাদেশে এই প্রথা চালু হয়।
দ্বীন মাযহাব মিল্লাতে খেদমত করে  হুজুর ক্বেবলা হযরত সৈয়দ তৈয়্যব শাহ রহঃ ১৪১৪ হিজরী ১৫ই জিলহজ ১৯৯৩ ইংরেজির ৭ই জুন সোমবার ওফাত বরণ করেন।

তথ্যসূত্রঃ
১। শাজরা শরীফ-দরবারে আলিয়া কাদেরিয়া
২। সিরিকোট থেকে রেঙ্গুন কৃতঃ মোছাহেব উদ্দীন বখতিয়ার
৩। সুন্নীয়তের পঞ্চরত্ন- অধ্যক্ষ মুহাম্মদ বদিউল আলম রিজভী
৪। মাসিক তরজুমান।
৫। দৈনিক আজাদী
৬। ইউকিপিডিয়া
৭। The islamic universities studies (part-A) vol-8, no- 1 dec -1999 ডক্টর আবদুল অদুদ

খোশবাস বার্তা

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
corona safety
সত্বাধিকার © খোশবাস বার্তা ২০১৬- ২০২৪
ডেভেলপ করেছেন : TechverseIT
themesbazar_khos5417