1. asifiqballimited@gmail.com : Asif Iqbal : Asif Iqbal
  2. Kamrulsohan55@gmail.com : কামরুল সোহান : কামরুল সোহান
  3. khoshbashbarta@gmail.com : ইউনুছ খান : ইউনুছ খান
শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫, ০৪:৪৩ অপরাহ্ন
খোশবাস বার্তা

জাহেলিয়াতে ঘেরা জাহান- ওমর আরিফ

ওমর আরিফ | শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
  • প্রকাশিতঃ সোমবার, ২২ জুন, ২০২০
  • ৩১৫৮ বার পঠিত
জাহেলিয়াতে ঘেরা জাহান- ওমর আরিফ

চারদিক অন্ধকার! দূর আকাশে মিটিমিটি তারা আর জোনাকি পোকার আলো-আঁধারের খেলায় দূর থেকে ভেসে আসা শিয়ালের হুক্কা হুয়া ডাকে নিস্তব্ধ রাতের আঁধার হয়ে উঠে গভীর রহস্যময়। আর রহস্যময় রাতের মতই কোনো এক অজানা আশঙ্কায় বিষাদে ছেয়ে গেছে আবরারের  হৃদয়। নিঝুম রাতে পুকুর পাড়ে দাড়িয়ে থাকা আবরারের সাথী তার বড় ভাই –‘ফারুক’। সমসায়িক নানা বিষয় নিয়ে বড় ভাইয়ের সাথে আলোচনা করছে আবরার।

“পৃথিবী যেন আজ ছেয়ে গেছে ঘোর অমানিশায় । মনুষ্যত্ব হারিয়ে মানুষ যেন আজ পরিণত হয়েছে দানবে। ভূলন্ঠিত আজ মানবতা । স্বার্থ আর লোভের কাছে পরাজিত ভালোবাসা। চারিদিকে হাহাকার আর করুণ আর্তনাদ” । অস্ফুট ভাষায় উৎকন্ঠিত ভাবে কথা গুলো এক নাগাড়ে বলেই চলছে আবরার। হঠাৎ থামিয়ে আবরার কে প্রশ্ন করলো ফারুক – ‘আজ কেনো এত বিচলিত কণ্ঠে এরূপ কথা বলছিস আবরার’? না বলে কি থাকতে পারি ভাই! তুমি কি দেখছনা ! পৃথিবীর পরাশক্তির দেশ গুলো কিভাবে চেপে বসেছে দুর্বল রাষ্ট্র গুলোর উপর। স্বাধীন দেশগুলোকে পড়িয়ে দিচ্ছে পরাধীনতার শৃঙ্খল। কিভাবে সিরিয়ার শিশুটি আর্তনাদ করছে ধ্বংসস্তূপে!  কিভাবে বাবা-মা’র কাছ থেকে ছিনিয়ে নিচ্ছে ফিলিস্তিনের সেই ফুটন্ত শিশু গুলোকে! আরাকান-কাশ্মীরে চলছে নির্মম অত্যাচার। উইগুর মুসলিমরা রয়েছে বন্দী। অপরদিকে দুর্ভিক্ষের করাল গ্রাসে ক্ষুধার্ত সোমালিয়ান শিশুটি আজ কঙ্কালসারস্বরুপ। মানবতার কথিত ফেরিওয়ালারা বুঝি আজ অন্ধ হয়ে আছে!

আচ্ছা ভাইয়া, পৃথিবীর এই নিষ্ঠুর সময়ের চেয়েও  কি জঘন্য কোনো সময় এসেছিলো? পৃথিবী কি পড়েছিলো এরূপ ঘোর অমানিশায়? -প্রবল আগ্রহে জিজ্ঞেস করলো আবরার।

ফারুক বলে –‘ আবরার ‘আজ তুই যে নিষ্ঠুর পৃথিবী কে দেখছিস তার চেয়ে আরও জগণ্য সময় পার করেছে পৃথিবী। সীমাহীন বর্বরতা আর বিশৃঙ্খলায় পূর্ণ ছিল সেই সময়ের পৃথিবী।

সত্যিই! কোন সেই যুগ? কোথায় ছিলো সেই যুগের মানুষ গুলি? প্রশ্ন করলো আবরার।

হ্যাঁ, ছিলো তুই যে নিপীড়িত জাতি গুলোর কথা বলছিস, তাদেরই একটি জাতি হল -আরব জাতি। এই আরবরাই ছিলো পৃথিবীর সব চেয়ে বর্বর মানবতাহীন এক জাতি। সেই সময়কে বলা হয়ে থাকে “আইয়ামে জাহেলিয়া”র যুগ অর্থাৎ অজ্ঞতার যুগ।

ঐতিহাসিকদের মতে ইসলামের আবির্ভাবের পূর্ববর্তী যুগকে বলা হয় আইয়ামে জাহেলিয়ার যুগ। ঐতিহাসিক পি.কে হিট্টির মতে – “The term jahiliyah, usually rendered time of ignorance or barbarism in reality means the period in which arabia had no dispensation, no inspired prophet, no revealed book. অর্থাৎ আইয়ামে জাহেলিয়া বলতে অজ্ঞতার যুগ কে বুঝায়। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে এর দ্বারা সেই যুগকে বুঝায় যে যুগে আরবে কোনো নিয়ম-কানুন ছিল না,কোনো  নবীর আবির্ভাব ঘটে নি এবং কোনো আসমানী কিতাব অবতীর্ণ হয় নি। [ ইসলামের ইতিহাস,P- 10,মিজানুর রশিদ ]

পবিত্র কুরআনেও ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বের সময়কে জাহেলিয়ার যুগ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কুরআন বলছে “হে নারীগণ পূর্ববর্তী জাহেলিয়ার যুগের ন্যায় তোমরা বাহিরে অবাধে চলাফেরা করো না। [৩৩, আহযাব ] তথ্য গুলো বললো ফারুক।

আবরার বলল – তাহলে ভাই! কেমন ছিল সেই যুগের মানুষের বৈশিষ্ট্য? কেমনইবা ছিল তাদের সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অবস্থা”?

অজ্ঞতা, বর্বরতা, নিষ্ঠুরতা আর পৈশাচিকতাই ছিলো সেই সময়কার মানুষের প্রধান চরিত্র। সামাজিক অবস্থাও ছিলো অত্যন্ত ভয়াবহ ও শোচনীয়। মানুষে মানুষে ছিল না কোনো প্রেম-প্রীতি,ভালোবাসা আর সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ। ঝগড়া, লুটতরাজ আর হিংসাত্মক মনোভাব ছিল তাদের নিত্য দিনকার সাথী। ঐতিহাসিক খোদা বখশের মতে- ‘War, women & wine were three absorbing passions of the Arabs.অর্থাৎ মদ, জুয়া ও নারী এই তিনটিই ছিল নিত্য ব্যবহার্য বস্তু।

মানবতা বিবর্জিত সেই যুগে নারীদের অবস্থা ছিল চরম অবমাননাকর। সমাজে তাদের মর্যাদা বলতে কিছুই ছিল না। পণ্যের মত বেচাকেনা করা হত তাদের। এমনকি লোকলজ্জা আর নিন্দার ভয়ে কন্যা সন্তানদের জীবন্ত কবর দেওয়া হত। [ সূরা নাহল-৫৮,৫৯]

অশ্লীলতা ও বেহায়াপনায় নিমজ্জিত জাহেলিয়ার যুগে পুরুষদের যেমন একাধিক স্ত্রী বা উপপত্নি থাকত তেমনি নারীদের মধ্যে ও ছিল বহুপতি গ্রহণের প্রচলন। [ আর রহিকুল মাখতুম-৫০]

বংশ গৌরব আর গোত্রীয় কলহের জেরে লেগেই থাকত যুদ্ধ-বিগ্রহ। “Might is right” অর্থাৎ জোর যার মুল্লুক তার নীতিই প্রচলিত ছিল তৎকালীন আরব সমাজে। ঐতিহাসিক এডওয়ার্ড গীবন এর মতে- অজ্ঞতার যুগে আরবে প্রায় ১৭ হাজার যুদ্ধ সংঘটিত হয়। [ ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি P-32,ডক্টর সিদ্দিকুর ও সামছুজ্জোহা ]

আবরার প্রশ্ন করল -ধর্মীয় আচার -আচরণ কেমন ছিল সেই যুগে?

ফারুক বলে- ধর্মীয় ভাবেও অজ্ঞতার যুগে আরবরা ৪ ভাগে বিভক্ত ছিল। যেমন: ১) ইহুদী ২) খ্রিস্টান ৩) প্রকৃতি পূজক বা মূর্তি উপাসক ৪) হানিফ সম্প্রদায়।

ইব্রাহিম (আ.) এর প্রচারিত এক স্রষ্টার অনুসারীরাই ছিল হানিফ সম্প্রদায়। ফারুক আরও বলল – ইব্রাহিম ও ইসমাঈল (আ.) দ্বারা পূণনির্মিত কাবাগৃহয়ের কারণেই আরব উপদ্বীপ সমকালীন সময়ে প্রসিদ্ধি লাভ করলেও তারা এক সময় তাদের ধর্মকে ভুলে গিয়ে মূর্তি পূজা শুরু করে। এমনকি কাবা গৃহে ৩৬০ টি মূর্তি স্থাপন করেছিল। এই জন্যই ঐতিহাসিক এস. এম ইমামউদ্দিন বলেন “ তারা তাদের পূর্বপুরুষ ইব্রাহিমের ধর্মকে ভুলে গিয়েছিল”। [ A political history of Muslim- vol 1,P- XXV]

এক কথায় নীতিনৈতিকতা বিবর্জিত সেই যুগে ছিল না কোন মানবতা ও ভালোবাসার বন্ধন। নিমজ্জিত হয়েছিল অন্ধকারের অতল গহ্বরে। সেই জন্যই ইতিহাসিক আমির আলী যথার্থই বলেছিলেন _ ‘Never in the history of the world was the need so great, the time so ripe for the appearance of a deliverer’- অর্থাৎ দুনিয়ার ইতিহাসে পরিত্রাণকারীর আবির্ভাবের এত বেশি প্রয়োজন এবং উপযুক্ত সময় অন্যত্র অনুভূত হয় নি। [ ইসলামের ইতিহাস, P-10, মিজানুর রশিদ ]

আবরার বলে -আজও আমাদের মধ্যে জাহেলি যুগের অনেক বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান রয়েছে। মূল্যবোধের চরম অবক্ষয়ে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ আমাদের সমাজ থেকে প্রায় বিলুপ্ত।

ফারুক বলে – আর সেই জন্যই প্রায় ১৫০০ বছর পূর্বে বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর আগমনে পৃথিবীর নিকৃষ্ট মানুষগুলো যেমনি সোনালী মানুষে পরিণত হয়েছে তেমনি আজও বিশ্বনবী (সা.) এর অনুপম আদর্শকে অনুসরণের মাধ্যমেই আমাদের পারিবারিক,সামাজিক,অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রকৃত মুক্তি আসবে।

আবরার বলল – হুমম, মুহাম্মদ (সাঃ)! দীর্ঘ সময়ের পর আবরার যেন প্রশান্তির নিশ্বাস ফেললো।

এরই মধ্যে রাত অনকে গভীর হল এবার ফিরে যাওয়ার পালা। রাতের নীরবতাকে পিছনে ফেলে দুজনেই ছুটে চলছে ঘরের পানে।

খোশবাস বার্তা

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
সত্বাধিকার © খোশবাস বার্তা ২০১৬- ২০২৫
ডেভেলপ করেছেন : TechverseIT
themesbazar_khos5417