দীর্ঘ ক্যারিয়ারে সাড়ে ৫ বছর দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বাংলাদেশের বাস্তবতায় এটা অনেক বড় ঘটনা। অধিনায়কত্ব করা মানে দীর্ঘ এক যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে একমাত্র জয়ী অধিনায়কের নাম মাশরাফি বিন মুর্তজা। খেলোয়াড়ী জীবনে ডেভ হোয়াটমোর, জেমি সিডন্স, শেন জার্গেনসন, চন্দিকা হাথুরুসিংহে, স্টিভ রোডসদের কোচ হিসেবে পেয়েছেন তিনি। অধিনায়ক হওয়ার পর সবচেয়ে বেশি পেয়েছেন চন্দিকা হাথুরুসিংহেকে। এই লঙ্কান কোচই মাশরাফির সবচেয়ে পছন্দের কোচ।
হাথুরুর রাজত্বকালে বাংলাদেশের ক্রিকেট সাফল্যে ভেসেছে। ওয়ানডেতে তো প্রায় অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিল ম্যাশ বাহিনী। রাশভারী কোচ হিসেবে দুর্নাম ছিল হাথুরুর। দলের প্রায় সর্বময় ক্ষমতা ছিল তার হাতে। একপর্যায়ে বেশ কয়েকজন সিনিয়র ক্রিকেটারের সঙ্গে তার দ্বন্দ্বের খবরও প্রকাশ্যে এসেছিল। মাশরাফির টি-টোয়েন্টি অবসরের পেছনেও হাথুরুসিংহের ইন্ধন ছিল বলে গুঞ্জন আছে। কিন্তু সেই হাথুরুই মাশরাফির সেরা কোচ। বিদায়বেলায় সাবেক গুরুর স্তুতিই শোনা গেল ম্যাশের মুখে।
শুক্রবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ শেষে সংবাদ সম্মেলনে ম্যাশ বলেন, ‘বাংলাদেশের মতো একটা আন্তর্জাতিক দলের কোচ যারা ছিলেন, প্রত্যেক কোচেরই একটা সামর্থ্য ছিল। তারমধ্যেও একটা বিশেষত্ব থাকে। যদি বলেন সেদিক থেকে হাথুরুসিংহেকে আমি অবশ্যই প্রথমে রাখব। যদিও অনেকে মনে করতে পারে যে হাথুরুসিংহের কারণে আমার টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার শেষ হয়েছে। আসলে তা না। এছাড়া আমি জেমি সিডন্সের কথা সব সময় বলে আসছি। আজকে সাকিব, তামিম, মুশফিক, রিয়াদের তৈরি হওয়ার পেছনে সিডন্সের অনেক অবদান। এটা তো ওরাও বারবার বলে।’
হাথুরুসিংহে হুট করে বাংলাদেশ দলের চাকরি ছেড়ে দিয়ে বিতর্কিত হয়েছিলেন। তবে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে একটা সম্মানজনক জায়গায় নিয়ে যাওয়ার পেছনে তার অবদান অনস্বীকার্য। তার আমলেই ঘরের মাঠে ভারত, পাকিস্তান , দক্ষিণ আফ্রিকাকে পর পর তিন ওয়ানডে সিরিজে হারায় বাংলাদেশ। টেস্ট জিতে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। এরপর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালও খেলে মাশরাফিরা। ২০১৭ সালের অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের মাঝেই পদত্যাগ করেন তিনি। হাথুরু যে জায়গায় ক্রিকেটকে রেখে গেছেন, সেখান থেকে এগিয়ে যাওয়ার তাগিত মাশরাফির কণ্ঠে।
সদ্য সাবেক এই অধিনায়ক আরও বলেন, ‘হাথুরুসিংহে যে জায়গায় রেখে গেছে, সেখান থেকে আমরা কোন পর্যায়ে যাই। সেটা কিন্তু দেখার বিষয়। ২০১৯ পর্যন্ত একটা ধাপ ছিল। বিশ্বকাপ শেষ ম্যাচ জিতলে আমরা পাঁচে থাকতাম। না জেতায় আটে ছিলাম। একটা ম্যাচের জন্য বড় পার্থক্য তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের ক্রিকেট একটা ধাপে আসছে। এখন ছয় মাস, এক বছর পরীক্ষার সময় না। এরপর নতুন আরেকজন এসে আবার পরীক্ষা নিরীক্ষা করবে। বাংলাদেশের ক্রিকেট ওই জায়গায় নাই। এখন আমাদের পরীক্ষা নিরীক্ষার সময় না।’