1. asifiqballimited@gmail.com : Asif Iqbal : Asif Iqbal
  2. Kamrulsohan55@gmail.com : কামরুল সোহান : কামরুল সোহান
  3. khoshbashbarta@gmail.com : ইউনুছ খান : ইউনুছ খান
শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫, ০৯:৫২ পূর্বাহ্ন
খোশবাস বার্তা

করোনার প্রভাবে কর্মসঙ্কটে শহর ছাড়ছেন অনেকেই, ভাল নেই মধ্যবিত্ত!

মেহেদী হাসান | ঢাকা |
  • প্রকাশিতঃ শনিবার, ৪ জুলাই, ২০২০
  • ১৬০৮ বার পঠিত
করোনার প্রভাবে কর্মসঙ্কটে শহর ছাড়ছেন অনেকেই। (ছবি: প্রতীকী)

করোনাভাইরাসের কারণে অর্থনৈতিকভাবে টিকে থাকা দুষ্কর হয়ে পড়ায় ইতোমধ্যেই আনুমানিক ৫০ হাজার ভাড়াটিয়া রাজধানী ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে গেছেন এবং আরও অনেকেই যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। করোনার প্রভাবে দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড একরকম স্থবির। বিভিন্ন সংস্থার তথ্যমতে, আয় কমেছে ৬০ শতাংশেরও বেশি মানুষের। কমেছে ভোগ ও বিনিয়োগ দুটিই। এতে সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েছে দেশের মধ্যবিত্ত। এই শ্রেণির অনেকেই চাকরিচ্যুত হয়েছেন অথবা কমিয়ে দেয়া হয়েছে বেতন। অন্যান্য উৎস থেকেও কমে গেছে আয়। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সংসারের খরচ কমাতে বাধ্য হচ্ছেন।

রাষ্ট্রীয়ভাবে মধ্যবিত্তদের সুনির্দিষ্ট কোনো সংজ্ঞা নেই। তবে অর্থনীতিবিদ ও সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, যাদের দৈনিক আয় ১০ থেকে ৪০ ডলারের মধ্যে, দেশে তারাই মধ্যবিত্ত। এ হিসাবে মধ্যবিত্তদের মাসিক আয় ২৫ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার মধ্যে। তবে এটি শুধু বেতনের মাধ্যমে আয় হতে হবে, এমন নয়। যে কোনোভাবে আয় করে যারা এ ধরনের একটি সামাজিক মর্যাদা তৈরি করেছেন, তারাই মধ্যবিত্ত। এক্ষেত্রে শিক্ষার হার বিবেচনা এবং গ্রাম ও শহরে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে।

ঢাকা শহর জুড়ে, বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, করোনা মানুষের স্বাভাবিক জীবনচক্রকে ওলটপালট করে দিয়েছেন। অদৃশ্য এ অণুজীবের সংক্রমণে শরীরের মতো জনজীবনও আজ বিপর্যস্ত। সবকিছুই স্থবির হয়ে পড়ায় অনেকের জীবনে এখন দুর্দিন চলছে। এ অবস্থায় প্রতিনিয়ত তাদের সময় কাটছে এক ধরনের অনিশ্চয়তা আর উৎকণ্ঠার মধ্যে।

সত্যি বলতে, এক প্রকার বাধ্য হয়েই বেশির ভাগ মানুষ বর্তমানে গৃহবন্দী থাকায় দিশেহারাই শুধু নয়, কর্মহীনতার চরম সঙ্কটেও আবর্তিত বটে, এতে মধ্যবিত্ত আর নিম্নশ্রেণীর মানুষের জীবন বিপন্ন প্রায়। রুজি রোজগারে আসছে এক অশনি সঙ্কেত।অনেকে অভাবে থেকেও মুখ ফুটে কারো কাছে বলতে পারছেন না। লজ্জায় হাত পাততে না পেরে তারা পরিবার নিয়ে নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। কবে এই দুঃসময় অতিক্রম করা যাবে তেমন আশ্বাসও কেউ দিতে পারছে না।

গত মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকেই অর্থনীতিতে করোনার প্রভাব পড়তে শুরু করে। মানুষের চলাচল কমে যায়। কেনাবেচা স্থবির হয়ে পড়ে। কমতে থাকে মানুষের আয়। প্রথমদিকে মধ্যবিত্তের ওপর তেমন প্রভাব পড়েনি। কিন্তু সংকট দীর্ঘায়িত হওয়ায় আক্রান্ত হতে থাকে তারা।

অন্যদিকে নিম্ন আয়ের লোকজন সরকার ও বিত্তবানদের কাছ থেকে নানা ধরনের সাহায্য ও সহযোগিতা পেয়েছেন এবং এখনও তা অব্যাহত আছে। কিন্তু সামাজিক বাস্তবতার কারণে মধ্যবিত্তের পক্ষে সেটা নেয়া যেমন সম্ভব নয়, তেমনি তাদের সহায়তা দেয়ার ব্যাপারে কার্যকর অর্থে কোনো পক্ষই (সরকার ও বিত্তবান) এগিয়েও আসছে না। বাধ্য হয়েই তাদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যাচ্ছেন।

শুধু দেশেই নয়, প্রবাসে যারা কাজ করতেন, তাদের বড় অংশ কাজ হারিয়ে দেশে ফিরেছেন। এরাও বড় সংকটে পড়েছেন। অর্থাৎ করোনাভাইরাসের আঘাতে রীতিমতো কষ্টে আছে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। পরিস্থিতি উত্তরণ না হওয়া পর্যন্ত মধ্যবিত্তদের জন্যও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।

ঢাকা শহরে বসবাসকারীদের ব্যাপারে পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে তারা একটি তথ্যভাণ্ডার গড়ে তুলেছে। এতে দেখা যায়, ঢাকা শহরে প্রায় বহুতল বাড়ি বা ফ্ল্যাটের মালিকানা রয়েছে ৬০ লাখ মানুষের। এর মধ্যে ভাড়া থাকেন ১ কোটি ২০ লাখ লাখ মানুষ। এদের অধিকাংশই মধ্যবিত্তের মধ্যে পড়েন। যেসব মধ্যবিত্তের বাড়ি, গাড়ি, মার্কেটে দোকানের মালিকানা রয়েছে, তারাও এখন সংকটে। অনেকে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বাড়ি তৈরি, ফ্ল্যাট বা গাড়ি কিনেছেন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯১ সালে ঢাকা শহরের জনসংখ্যা ছিলো ৬৮ লাখ। এরপর থেকে এই নগরের ওপর জনসংখ্যার চাপ বাড়তে বাড়তে বর্তমানে তা মেগাসিটিতে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড আরবানাইজেশন প্রসপেক্টাস ২০১৮ অনুযায়ী ঢাকা শহরের জন্য সংখ্যা ১ কোটি ৭০ লাখ ছাড়িয়েছে।

গত এপ্রিলে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, করোনা মহামারির কারণে বিশ্বজুড়ে এ বছর  ১৯ কোটি লোক চাকরি হারাতে পারে।

একই মাসে ঢাকা ভিত্তিক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের চালানো এক জরিপে বলা হয়, মে মাসের শেষ পর্যন্ত মহামারির কারণে দেশে দেড় কোটি লোক তাদের চাকরি হারিয়েছে।

ব্র্যাক, ডেটাসেন্স এবং উন্নয়ন সমন্বয়ের যৌথভাবে চালানো এক জরিপে বলা হয়, মহামারির কারণে দেশে ১০ কোটি ২২ লাখ মানুষ আর্থিক এবং অর্থনৈতিক ঝুঁকিতে পড়েছে। যাদের ওপর এই জরিপ চালানো হয়, তাদের ৩৪ শতাংশ পরিবার জানিয়েছে, মহামারির কারণে বিগত সময়ে তাদের প্রত্যেকের পরিবারের অন্তত একজন মানুষ চাকরি হারিয়েছে।

জরিপ বলছে, ইতোমধ্যে ৭৪ শতাংশ পরিবারের আয় কমে গেছে এবং চাকরি হারিয়ে বিদেশ থেকে ১৪ লাখ প্রবাসী দেশে ফেরত এসেছে।

এমন এক কঠিন পরিস্থিতিতে, দেশ জুড়ে আজ দিশেহারা মধ্যবিত্ত পরিবারের সাধারণ মানুষ গুলো। এক কথায় করোনার এই চরম দুর্যোগে অসহায় আজ মধ্যবিত্ত পরিবার। সর্বস্ব ব্যথা  যেন, কোন অংশেই কম নয়। তাই অর্থনীতির গতিধারায় এই মধ্যবিত্তদের স্বার্থ সংরক্ষণ নিয়ে আলাদা করে ভাবার সময় এসেছে এখন।

তাই আসুন, আমরা সবাই মিলে বাস্তবতা ও চলমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে, মধ্যবিত্ত পরিবারের পাশে দাঁড়াই।

খোশবাস বার্তা

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
corona safety
সত্বাধিকার © খোশবাস বার্তা ২০১৬- ২০২৪
ডেভেলপ করেছেন : TechverseIT
themesbazar_khos5417