কুমিল্লার বরুড়া উপজেলায় পরকীয়ার দায়ে স্ত্রীকে তালাক দেয়াকে কেন্দ্র করে স্বামীর বসতঘর ভাঙচুর-লুটপাট করেছে স্ত্রীর স্বজনরা। এতে স্বামীর মা, বাবা সহ ৪ জন আহত হয়েছে। গত ১ মে উপজেলার আগানগর ইউনিয়নের শরাফতি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আহতরা বরুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ ঘটনায় বরুড়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী পরিবার।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০০২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর শরাফতি গ্রামের রুছমত আলীর মেয়ে শাহিদা আক্তারকে সামাজিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিয়ে করেন একই গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে মনির হোসেন। বিয়ের ৫ বছর পর জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান তিনি। স্বামী প্রবাসে থাকার সুযোগে একসময় পরকীয়াসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন স্ত্রী শাহিদা আক্তার। শাহিদাকে পরকীয়া ও অপকর্ম থেকে বিরত রাখতে একাধিকবার পারিবারিক ও সামাজিক ভাবে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে বিয়ের ১৬ বছর পর (২০১৯ সালের ২৬ আগস্ট) তার সাথে বিয়ে বিচ্ছেদ করেন স্বামী মনির হোসেন। যথাযথ প্রক্রিয়ায় বিচ্ছেদ সংক্রান্ত কাগজপত্র হাতে পাওয়ার পর পিত্রালয়ে চলে যান শাহিদা আক্তার।
পরবর্তীতে স্বজনদের প্ররোচনায় মিথ্যা অভিযোগ এনে কুমিল্লার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করে পুনরায় জোরপূর্বক তিনি স্বামীর বাড়িতে অবস্থান নেন। এতে সামাজিক গণ্যমান্য ব্যক্তিদের হস্তক্ষেপে কিছুদিন পর পুনরায় তিনি পিত্রালয়ে চলে যান। গত ১৯ এপ্রিল রাতে আকস্মিক ভাবে মনির হোসেনের বাড়িতে এসে দরজা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে আত্মহত্যার হুমকি দেয় শাহিদা আক্তার। বিষয়টি স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং প্রশাসনকে অবগত করেন মনিরের পরিবারের সদস্যরা। সামাজিক ভাবে নির্দেশ দেয়ার পরও পিত্রালয়ে না গিয়ে ২১ এপ্রিল সকালে আত্মহত্যার চেষ্টা করে শাহিদা আক্তার। সামাজিক ভাবে মীমাংসায় ব্যর্থ হয়ে এ বিষয়ে বরুড়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন মনির হোসেনের মা মনোয়ার বেগম।
এদিকে গত ১ মে রাতে শরাফতি গ্রামের আলী নেওয়াজের ছেলে দুলাল হোসেনকে সাথে নিয়ে পুনরায় শাহিদা আক্তার স্বামীর বাড়িতে প্রবেশ করলে শ্বশুর-শাশুড়ি তাকে বাধা দেয়। এসময় বাধা দেয়ার বিষয়টি পিত্রালয়ের স্বজনদের অবগত করলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে সদলবলে এসে স্বামী মনির হোসেনের পিতা সিরাজুল ইসলাম ও মাতা মনোয়ারা বেগমকে মারধর শুরু করেন। শোর-চিৎকার শুনে এগিয়ে এলে নিকটাত্মীয় কোহিনুর আক্তার ও নিলুফা বেগমকেও তারা মারধর করে। এসময় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তাদেরকে আহত করা হয়। পরে হামলাকারীরা তাদের বসতঘর ও বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর এবং লুটপাট করে।
আহতদের উদ্ধার করে বরুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাদেরকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এ ঘটনায় মনিরের মা মনোয়ারা বেগম বাদী হয়ে স্ত্রী শাহিদা আক্তার, তার পিতা রুছমত আলী, ভাই আলী আহম্মদ, একই গ্রামের আলী নেওয়াজের ছেলে দুলাল হোসেন, আমির হোসেনের স্ত্রী মাহফুজা বেগম, মৃত সুরজত আলীর স্ত্রী রাবেয়া বেগম, ছেলে বশির আহম্মদ, আহসান উল্লাহ ও রবিউল্লাহকে অভিযুক্ত করে বরুড়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এরই প্রেক্ষিতে ৫ মে মঙ্গলবার বরুড়া থানার উপ-পরিদর্শক মোঃ আনিছুর রহমান সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এদিকে এ ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয়রা গণমাধ্যমকর্মীদেরকে জানান, ‘অভিযুক্ত শাহিদা আক্তার উশৃঙ্খল স্বভাবের। স্থানীয় কুচক্রী মহলের ছত্রছায়ায় তিনি যাবতীয় অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন এবং গ্রামের একাধিক ব্যক্তিকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে আসছেন।’
মনির হোসেনের মা মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘বাবারে এই মেয়েটাকে আমার ছেলে বিয়ে করে বাড়িতে আনার পর থেকে সে আমাদেরকে নানা ভাবে জ্বালাতন করেছে। আমার ছেলে বিদেশ যাওয়ার পর সে একাধিক ব্যক্তির সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। বাধ্য হয়ে আমার ছেলে তাকে তালাক দেয়। তালাকের পরও সে বার বার আমাদেরকে বাড়িতে এসে নির্যাতন করে। বিষয়টি সামাধানের জন্য আমরা বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করেছি, সে কারো তোয়াক্কা করে না।’
এ বিষয়ে জানতে মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও অভিযুক্ত শাহিদা আক্তার ও তার স্বজনদের বক্তব্য নেয়া যায়নি।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ ইফতেখার আলম ভূঁইয়া বলেন, ‘হামলার বিষয়টি শুনেছি। পবিত্র রমজান মাসে এ ধরণের ঘটনা অবশ্যই দুঃখজনক। আমি তাৎক্ষণিক আহতদেরকে যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিতের নির্দেশ দিয়েছি। আজ মঙ্গলবার বিকেলে আমার পরিষদের সদস্যদেরকে নিয়ে ঘটনাস্থল এবং আহতদেরকে দেখতে যাবো। যেহেতু ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ করেছে, তাই আমরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’
এ বিষয়ে বরুড়া থানার পুলিশ পরিদর্শক সত্যজিৎ বড়ুয়া বলেন, ‘শরাফতি গ্রামে হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। মঙ্গলবার অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ