মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের খবরে বলা হয়, জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা নেওয়ার পর তাঁর নির্দেশে জানামতে এটাই প্রথম হামলা। সিরিয়ায় যে স্থানে মার্কিন সেনাদের লক্ষ্য করে রকেট হামলা হয়েছিল, গতকালের ওই হামলা নির্দিষ্ট করে সেই স্থানে চালানো হয়নি। তবে মার্কিন বাহিনীর হামলার স্থানে ইরান-সমর্থিত শিয়া মিলিশিয়ারা সক্রিয় রয়েছেন।
মার্কিন বাহিনীর হামলা প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি বলেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের নির্দেশনায় হামলাটি চালানো হয়েছে। মার্কিন ও যৌথ বাহিনীর ওপর সম্প্রতি যে রকেট হামলা হয়েছে, তার জবাব দিতেই যে শুধু বাইডেন এটি অনুমোদন দিয়েছেন তা নয়; বরং মার্কিন সেনাদের ওপর হুমকির বিষয়টিকেও মোকাবিলা করতে বলেছেন তিনি।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, সিরিয়া-যুদ্ধের ওপর নজর রাখা যুক্তরাজ্যভিত্তিক পর্যবেক্ষক গোষ্ঠী সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস বলেছে, মার্কিন বাহিনীর হামলায় ইরানপন্থী ১৭ জন মিলিশিয়া নিহত হয়েছেন।
সিএনএন জানায়, কিরবি বলেছেন, সিরিয়ায় মোতায়েন যৌথ বাহিনীর অংশীদার ও মার্কিন মিত্রদেশগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করেই প্রেসিডেন্ট বাইডেন হামলা চালানোর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ হামলায় সিরিয়া সীমান্তে ইরান-সমর্থিত কাইতিব হিজবুল্লাহ, কাইতিব সায়েদ আল শুহাদাসহ কয়েকটি মিলিশিয়া গোষ্ঠীর একাধিক স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
কিরবি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর সদস্যদের রক্ষায় বাইডেন প্রশাসন পদক্ষেপ নেবে—অভিযানের মধ্য দিয়ে এ দ্ব্যর্থহীন বার্তাই পাঠানো হয়েছে। একই সময়ে, আমরা স্বেচ্ছায় কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি; সিরিয়ার পূর্বাঞ্চল ও ইরাকের সার্বিক পরিস্থিতি শান্ত করাই যার লক্ষ্য।’
মার্কিন হামলার স্থানকে মিলিশিয়ারা অস্ত্র চোরাচালানের কাজে ব্যবহার করত বলে ধারণা করা হয়ে থাকে। পেন্টাগনের ওই কর্মকর্তা বলেন, ভবিষ্যতে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর হামলা করার সক্ষমতা হ্রাস করা এবং বিদ্রোহীদের সাম্প্রতিক হামলা সম্পর্কে বার্তা পাঠাতেই এ হামলা চালানো হয়েছে।
সিরিয়ায় হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত প্রশাসনের একেবারে শীর্ষস্থান থেকে নেওয়া হয়েছে জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বলেন, সেনাবাহিনীর কোনো সুনির্দিষ্ট সুপারিশের ভিত্তিতে এ হামলা করা হয়নি।
বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে একটি সমঝোতায় আসার চেষ্টা করছে ওয়াশিংটন ও তেহরান। গতকালের হামলা ইরানের কর্মসূচি নিয়ে চলমান ভঙ্গুর সমঝোতা-প্রক্রিয়াকে জটিল করে তুলবে বলে মনে করা হচ্ছে।
মার্কিন সেনাদের ওপর রকেট হামলার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র নির্দিষ্ট করে কোনো গোষ্ঠীকে অভিযুক্ত বা তারা ইরানের সমর্থনপুষ্ট বলে উল্লেখ করেনি। তবে গতকালের হামলার মধ্য দিয়ে বাইডেন প্রশাসন কাকে অভিযুক্ত করতে চায়, তা স্পষ্ট করে দিয়েছে।
সিরিয়ায় ইরবিল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে ১৫ ফেব্রুয়ারি মার্কিন সেনাদের লক্ষ্য করে চালানো রকেট হামলায় এক বেসামরিক ঠিকাদার, চার মার্কিন ঠিকাদার ও এক মার্কিন কর্মী আহত হন।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাঈদ খাতিবজাদেহ ইরবিলে ১৫ ফেব্রুয়ারির হামলার সঙ্গে তাঁর দেশের কোনো রকম সংশ্লিষ্টতার কথা নাকচ করে দিয়েছিলেন।