আজ (০৬ ফেব্রুয়ারী) খোশবাস উঃ ইউনিয়ন এর নারায়ণপুর গ্রামের প্রয়াত মোঃ আবুল হাসেম মাস্টার এর ২৬তম মৃত্যু বার্ষিকী। কিংবদন্তী এই শিক্ষকের চলে যাওয়ার স্মৃতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন তাঁরই সন্তান বিশিষ্ট ব্যবসায়ী অ্যম্বিশা ইন্টারন্যাশনাল এর চেয়ারম্যান ” মোঃ শামিমুল ইসলাম শামিম।
“আজ আমার বাবার 26 তম মৃত্যুবার্ষিকী। তাই বাবাকে নিয়ে কিছু কথা বলবো….
১৯৯৫ সাল ০৬ ফেব্রুয়ারি রোজ মঙ্গলবার সকাল ১১ টা ২০ মিনিটে আমার বাবা মোঃ আবুল হাসেম মাস্টার না ফেরার দেশে চলে গেলেন। আমি তখন সবেমাত্র ক্লাস সিক্সে পড়ি। আমি তখন বুঝতাম না বাবা আমাদেরকে ছেড়ে সারা জীবনের জন্য চলে গেছে। আমার মেজো ভাই তখন ঢাকায় থাকত বড় ভাই মালয়েশিয়ায় আমরা দুই ভাই তখন বাড়িতে। সম্ভবত এসব কারণেই সেই দিন আর জানাজা টা হয়নি বাবার। আত্মীয়-স্বজন ও বাড়ির মুরুব্বিরা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিল পরের দিন সকালে জানাজা হবে। বিশেষ করে সেই রাত্রিতে আমি আমার বাবার লাশ জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে ছিলাম। যতটুকু মনে পড়ে বাবা অন্যদিনের মত আমাকে আর জড়িয়ে ধরেন না। আমি তখনও জানতাম না এ বাবা আর কখনো আমাকে জড়িয়ে ধরবে না।
জীবন চলার পথে সৎ ভাবে বেঁচে থাকার জন্য অনেক কিছুই করেছেন। কিন্তু কোনদিনও অসৎ কোন কাজে জড়িত ছিলেন না। সদাহাস্যময় মিশুক প্রকৃতির মানুষ ছিলেন আমার বাবা। যেহেতু আমার বাবা প্রাইমারি স্কুলের একজন শিক্ষক ছিলেন । তাই এলাকার প্রত্যেকটি মানুষ তাকে শ্রদ্ধা ও সম্মান করতেন।
মাঝে মাঝে এমন অনেক সময় সবার জীবনে আসে যখন মানুষ সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে, তখন কারো পরামর্শ খুব জরুরি হয়ে পড়ে সেই সময়ে পাশে দাঁড়ানোর মতো আদর্শ একজন মানুষ হল বাবা।।
এক একটা দিন বড় একা লাগে, বাবার স্পর্শটুকু, বাবার মায়াভরা ডাক অথবা মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়া। বাবাকে ছাড়া বাঁচতে পারব কখনও কল্পনা করিনি, কিন্তু বাস্তবতা বড়ই কঠিন। কেটে যাচ্ছে একেকটা মাস একেকটা বছর বাবা নেই,আছে বাবার অনেকগুলো স্মৃতি অনেকগুলো কথা যা ভুলতে পারি না, ভোলা যায় না। বাবা আজ আপনাকে অনেক বেশি মনে পড়ছে । মনে পরছে পড়ালেখা রেখে খেলার জন্য যে মার দিতেন, আদর করে যখন বাবা বলে ডাকতেন গোসল করিয়ে দিতেন কোথাও যাওয়ার সময় শেষ বয়সে আমাকে হাতে করে নিয়ে যেতেন। বাবা অনেক দুষ্টামি করতাম আজ অনেক বছর কোন মার খাই না আপনার হাতের খুব ইচ্ছে হচ্ছে মার খেতে।
বলা যায়, লিখতে পারছিনা। লিখতে বসলেই অজস্র স্মৃতির ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছি আমি। মাথার ভিতরে তোলপাড় করছে ঘটনাপ্রবাহ। কোনটা ছেড়ে কোনটা লিখবো ভেবে পাচ্ছিনা।তাই বোধহয় এই লেখাটিতে আপনার কোন সম্ভাষণ জানাতে পারলাম না। যাই লিখি না কেন আপনার জন্য অতি নগন্য হয়ে যাবে।
আজ আমি আমার সন্তানের বাবা। জানিনা আপনার মত করে ওকে সময় দিতে পারবো কিনা। আমার অনেক দুষ্টামির কারণ আপনি অনেক রেগে যেতেন তখন বুঝতাম না যে আপনার ঐ কঠিন মাথার ভিতরে যে পরিমান ভালোবাসা লুকায়িত ছিল পৃথিবীর সমস্ত ভালোবাসা যেন করলেও তার সমতুল্য হতে পারে না।
আল্লাহ আপনাকে ওপারে ভালো রাখুক। জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুক। আর এই পৃথিবীতে যাদের বাবা-মা এখনো বেঁচে আছে তাদের প্রতি অনুরোধ রইল আপনারা সবাই বাবা-মার হক আদায় করার চেষ্টা করবেন। যদিও এই হক আদায় করা সম্ভব হয় না তবুও বলবো সবাই একটু চেষ্টা করবেন। বিশ্বাস করেন বাবা-মাকে ভরণপোষণ করলে অথবা তাদের পিছনে কোন টাকা পয়সা ব্যয় করলে, এই টাকা বিধাতা আপনাকে কোনো না কোনোভাবে দিয়ে দিবে। ভালো থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।”