1. asifiqballimited@gmail.com : Asif Iqbal : Asif Iqbal
  2. Kamrulsohan55@gmail.com : কামরুল সোহান : কামরুল সোহান
  3. khoshbashbarta@gmail.com : ইউনুছ খান : ইউনুছ খান
রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:১৬ অপরাহ্ন
খোশবাস বার্তা

রামমোহন তমিজিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র জাপর সরকার চমকে দিয়েছে!

ইউনুছ খান
  • প্রকাশিতঃ সোমবার, ১ জুন, ২০২০
  • ২৩২২ বার পঠিত
রামমোহন তমিজিয়া উচ্চ বিদ্যালয়
ছবিতে হাসি মুখে জাপর সরকার

রামমোহন তমিজিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র জাপর সরকার চমকে দিয়েছে পুরু এলাকাবাসীকে।

প্রয়াত বাবার দ্বিতীয় সংসারের কনিষ্ঠ পুত্র জাপর সরকার। ছোট বেলায় বাবাকে হারিয়ে অনেকটা অনাদরে বড় হয়েছেন। জাপরের বাবা ছিলেন বরুড়া উপজেলাধীন খোশবাস উত্তর ইউনিয়নের গোপালনগর গ্রামের ডাঃ আব্দুল জব্বার। প্রথম সংসারের স্ত্রী বিয়োগের পর ডাঃ আব্দুল জব্বার দ্বিতীয় বিয়ে করেন জাপর সরকারের মাকে।

জাপরের যখন ৬বছর বয়স চলে তখন তার পিতা ডাঃ আব্দুল জব্বার মৃত্যু বরণ করেন। ডাঃ আব্দুল জব্বার সরকারের দ্বিতীয় সংসারে তিন মেয়ে এক ছেলে। মেয়ে তিনজন বড় আর পরিবারের ছোট ছেলে জাপর।

অভাব অনটনের সংসারে জাপর সরকার অনেকটা অনাদরে বড় হয়েছেন। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে জাপর পাড়ার কিছু দুষ্টু ছেলেদের পাল্লায় পড়ে পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়ে গিয়েছিল।অনেকটা নষ্ট হওয়ার উপক্রম! সেই সময় পরম মমতার হাত ভুলিয়ে জাপর কে কেউ কাছে টেনে দুটি ভালো কথা বলেনি সবাই তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছে। ক্লাসে জাপর পড়া পারেনি যেদিন, সেদিন বন্ধুরা জাপরের সাথে কেউ কেউ দূর ব্যবহার করেছে ক্লাসের সহপাঠীদের ভালোবাসা না পেয়ে অনেকটা ছন্নছাড়ার মত জীবন ছিল জাপরের।ক্লাসের পিছনের টুলে স্থায়ী যায়গা হত জাপরের কখনো শিক্ষকদের বেত্রাঘাতের ভয়ে স্কুল ফাঁকি দিতে হত।

২০১৯ সালে এস এস সি পরিক্ষার্থী ছিল জাপর। টেস্ট পরিক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় সেই বছর আর ফাইনাল পরিক্ষা পর্যন্ত যাওয়া হয়নি তার। অথচ সেই বছর অনেকে নাকি টেস্ট পরিক্ষায় অকৃতকার্য হয়েও এস এস সি দিতে পেরেছে কিন্তু জাপরের মূল শক্ত না হওয়ায় ২০১৯ সালে এস এস সি পরিক্ষা দেওয়া হয়নি জাপরের।

এস এস সি পরিক্ষা না দিতে পেরে বিষণ্ণ মনে ভবঘুরের মত এইদিক সেদিক ঘুরাঘুরি করত জাপর। ২০১৯ সালে মার্চ মাসের দিকে জাপরের স্কুলের সামনে একটা লাইব্রেরি ছিল শাকি লাইব্রেরি। সেখানে ঐ লাইব্রেরি ওয়ালার সাথে তার একটা পরিচয় হয় এবং তার জীবনের বিচ্ছিন্ন গল্প শুনে লাইব্রেরি ওয়ালা তার প্রতি সদয় ব্যবহার করেন এবং তাকে উৎসাহী মূলক অনেক কথাবার্তা বলতেন। জাপরের মনকে স্থির করার জন্য লাইব্রেরি ওয়ালা জাপর কে অনেক গল্পের বই দিতেন।গল্পের বই পড়তে পড়তে জাপরের একটা নেশা পেয়ে যায়। জাপর কে লাইব্রেরি ওয়ালা বললেন, যত অপমান হোক অবহেলা হোক সব কিছুকে তুচ্ছ করে তোমাকে এগিয়ে যেতে হবে স্কুলের বই একটু একটু পড় আর ভালো না লাগলে গল্পের বই পড়ো তবুও দুষ্টু ছেলেদের সাথে আড্ডা দিয়ে জীবন কে নষ্ট করা যাবেনা। জাপর লাইব্রেরি ওয়ালার কিছু পরামর্শ নিজের মধ্যে ধারন পুনরায় স্কুলে যাওয়া শুরু করলেন ২০২০ সালে এস এস সি পরিক্ষার দেওয়ার প্রস্তুতি।

কোন কোন শিক্ষকদের অপমান অবহেলায় অনেকটা জর্জরিত হয়ে যেত জাপর।কাউকে বলতে পারতনা ভিতরের হাহাকার! সহপাঠীরা বাঁকা চোখে তাকাত জাপরের দিকে নাক ছিটকে মেয়েরা কেউ কেউ জাপর কে বড় ভাই আংকেল বলে সম্বোধন করত, জাপরের ভিতরে কষ্ট হলেও হেসে উড়িয়ে দিতেন।

স্কুলের লাইব্রেরিতে একটা গল্পের বইয়ের খোঁজে যাওয়ায় লাইব্রেরিয়ান হুনকার দিয়ে বলছিল, হুম ক্লাসের পড়া পারেনা আবার গল্পের বই খোঁজে!

সময়ের গতি কারো জন্য থেমে থাকেনা। ২০১৯ সালে এস এস সি পরিক্ষা না দিতে পারলেও ২০১৯ সালের শেষের দিকে রামমোহন তমিজিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০২০ সালের এস এস সি পরিক্ষার পূর্ব প্রস্তুতি সরূপ টেস্ট পরিক্ষা শুরু হয়েছে। টেস্ট পরিক্ষা চলছে জাপরের। টেস্ট পরিক্ষার মাঝামাঝি প্রধান শিক্ষক গৌরাঙ্গ রায় চৌধুরী জাপরের পিঠে হাত দিয়ে বললেন এইবার টেস্টে পাশ করলে মিষ্টি আছে তোর জন্য। যাহাহোক ভাগ্যে এইবার সহায় হয়েছে জাপরের টেস্ট পরিক্ষায় পাশ করে ফরম পূরণ করেছে এস এস সি পরিক্ষা দেওয়ার। ২০২০ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে জাপরের এস এস সি পরিক্ষা শুরু হয়েছে। কেন্দ্র পড়েছে মহেশপুর আজিজিয়া উচ্চ বিদ্যালয় সেন্টার। জাপরের প্রধান শিক্ষক গৌরাঙ্গ বাবু খুব চিন্তিত জাপর কে নিয়ে।তিনি পরিক্ষার কেন্দ্রে কেন্দ্রে বার বার জাপরের কাছে যান।গিয়ে বলেন সব লিখছস? জাপর বলে জি স্যার। তবুও গৌরাঙ্গ স্যারের স্বস্তি বিশ্বাস নেই জাপরের প্রতি তিনি চিন্তিত জাপর যদি খারাপ করে তাহলে তার স্কুলের শতভাগ পাশ থাকবে না। তিনি জাপরের খাতায় কোন ভুল হল কিনা দেখেন, জাপর কে অভয় দিয়ে বলেন, না পারলে আমাকে জিজ্ঞেস করিস তবুও ভুল লিখবি না।

জাপর পরিক্ষা দিয়ে সবাইকে আশ্বাস দেয় তার পরিক্ষা ভালো হইছে তবুও কেন জানি সহপাঠীরা তার কথায় বিশ্বাস করতে পারেনা।

৩১ শে মে এস এস সি পরিক্ষার ফলাফলে রামমোহন তমিজিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৫৫ জন এস এস সি পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করে ১৫৪ জন পাশ করেছে। এ+ পেয়েছে ২৬ জন। এই ফলাফল শুনে রামমোহন তমিজিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদ থেকে শুরু করে ছাত্রছাত্রীরা ধরেই নিয়েছে সেই জাপর সরকার ফেল করেছে।

কিন্তু না জাপর ফেল করেনি, জাপর সরকার পাশ করে সবার সন্দেহ কে দূর করে দিয়েছে। তার এস এস সি পয়েন্ট হলো ৩.৬৭। অভিনন্দন জাপর! ভবিষ্যতে ভালো করবে।

খোশবাস বার্তা

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
সত্বাধিকার © খোশবাস বার্তা ২০১৬- ২০২৪
ডেভেলপ করেছেন : TechverseIT
themesbazar_khos5417