বড় কুবো বেশ কয়েকটি উপপ্রজাতিতে বিভক্ত। কোন কোন উপপ্রজাতিকে অনেক সময় পূর্ণাঙ্গ প্রজাতির মর্যাদা দেওয়া হয়। এরা আকারে বড়, দেখতে অনেকটা দাঁড়কাকের মত। লেজ বেশ লম্বা এবং ডানা তামাটে-বাদামি। ঘন জঙ্গল থেকে আবাদি জমি, এমনকি শহুরে বাগানেও এদের সচরাচর দেখা মেলে। ওড়ার চেয়ে হেঁটে বেড়াতে এরা বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। প্রায়ই পোকামাকড়, পাখির ডিম ও ছানার খোঁজে এদের ডালে ডালে অথবা ভূমিতে চরে বেড়াতে দেখা যায়। কুকুলিফর্মিস বর্গের অন্তর্গত হলেও জাতভাই কোকিলদের মত এরা বাসা পরজীবী নয়; অর্থাৎ অন্য পাখির বাসায় ডিম পাড়ে না। এদের গম্ভীর স্বর কোন কোন এলাকায় অমঙ্গলের সংকেত বলে চিহ্নিত।
বড় কুবো আলোকময় বন, বাগান ও মানববসতির কাছাকাছি বাস করে। সাধারণত একা বা জোড়ায় বিচরণ করে। এদের খাদ্যতালিকা বেশ বড়। বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড়, শুঁয়োপোকা, শামুক, এমনকি ছোটখাটো মেরুদণ্ডী প্রাণী যেমন- করাতী বোড়া (Echis carinatus), ব্যাঙ, টিকটিকি, ইঁদুর ইত্যাদি এরা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। এছাড়া পাখির ডিম, ছানা, ফল ও বীজ এদের প্রিয় খাদ্য। তামিলনাড়ুতে বড় কুবোর মূল খাদ্য এক প্রজাতির শামুক, Helix vittata। এছাড়া এরা কলকে ফুলের (Thevetia peruviana) বিষাক্ত ফল খায়। পাম অয়েল শিল্পে এরা ক্ষতিকারক বালাই হিসেবে চিহ্নিত, কারণ এরা প্রায়ই পাকা পামের রসালো শাঁস খেয়ে ফেলে। মাটিতে ধীরে হাঁটে এবং হঠাৎ শিকারকে ঠোঁট বা পা দিয়ে চেপে ধরে শিকার করে। ঝোপের তলায় তলায় ঘুরে ওরা যখন খাবার খোঁজে, তখন দীর্ঘ পুচ্ছটি প্রায় মাটি ছুঁয়ে থাকে। বিপদের টের পেলে ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে পড়ে, কখনো ছোট দূরত্বে উড়ে গিয়ে লুকিয়ে পড়ে।
সকালবেলা প্রায়ই উঁচু গাছের চূড়ায় একা অথবা জোড়া জোড়ায় লেজ ও ডানার পালক ছড়িয়ে সূর্যস্নান করতে দেখা যায়। প্রজননকালে দক্ষিণ ভারতে এক এক জোড়া বড় কুবো নিজেদের জন্য ০.৯ থেকে ৭.২ হেক্টর এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে (গড়ে ৩.৮ হেক্টর)। সকালের উষ্ণ সময়গুলোতে ও বিকেলের শেষে এরা সবচেয়ে বেশি ক্রিয়াশীল থাকে।ওড়ার চেয়ে দৌড়াতে এরা সাচ্ছন্দ্যবোধ করে বেশি, সেজন্য মাটিতেই এদের বেশি দেখা যায়।
সচরাচর অনুরক্তিক উঁচু থেকে নিচু গভীর ও প্রতিধ্বনিতসুরে ডাকে: কুপ–কুপ–কুপ…। ছয়-সাতবার ডাকে।গরমের দিনে বহুদূর থেকে ওদের ডাক শোনা যায়। সাধারণত একটি ডাক শুরু করলে প্রত্যুত্তরে আরেকটির ডাক শোনা যায়।পূর্বরাগের সময়ে স্ত্রী পাখি নিচু স্বরে তীক্ষ্ন ডাক ডাকে। এছাড়া খসখসে গলায় ও আক্রমণাত্ম হিস হিস শব্দও করতে পারে।
দক্ষিণ ভারতে বড় কুবোর প্রজনন মৌসুম প্রধানত বর্ষাকালের পরে শুরু হয়। তবে স্থানভেদে প্রজনন মৌসুমে বিভিন্নতা দেখা যায়। জুন থেকে সেপ্টেম্বর এর মূল প্রজননকাল।বড় কুবো স্বভাবে একগামী। পূর্বরাগে পুরুষ কুবো মাটিতে স্ত্রী কুবোকে তাড়া করে ও তার জন্য বিভিন্ন খাদ্য নিবেদন করে। স্ত্রী কুবো লেজ ও ডানা নামিয়ে গ্রহণযোগ্যতা প্রকাশ করে। প্রধানত পুরুষই বাসা তৈরি করে। বাসা বানাতে তিন থেকে আটদিনের মত সময় লাগে।শুকনো বাঁশপাতা, খড়কুটো, চিকন ডালপালা ইত্যাদি দিয়ে ঝোপের আগায় বা বড় গাছের ডালে বড় আকারের আগোছালো একটি বাসা করে। বাসার কেন্দ্রে ওল্টানো বাটির মত একটি খাদ থাকে। ভূমি থেকে বাসা সাধারণত ৬ মিটার উঁচুতে বানানো হয়। বাসা বানানো হয়ে গেলে স্ত্রী পাখি ৩-৫টি ডিম দেয়। ডিমের মাপ ৪.০ × ২.৮ সেমি ও গড় ওজন ১৪.৮ গ্রাম। সদ্য পাড়া ডিমে সাদার উপর হালকা হলুদের আভা থাকলেও পরে সে আভা থাকে না। স্ত্রী-পুরুষ দুজনেই তা দেয়। ১৫-১৬ দিন পর ডিম ফুটে ছানা বের হয়। ১৮ থেকে ২২ দিনে ছানারা উড়তে শেখে। দক্ষিণ ভারতে এক গবেষণা অনুসারে ৭৭% বাসার ডিম ফুটে ছানা বের হয় ও ৬৭% বাসার ছানারা উড়ে চলে যেতে সক্ষম হয়। দাঁড়কাক (Corvus macrorhynchos) প্রায়ই বাসায় হানা দিয়ে ডিম খেয়ে ফেলে। কখনও কখনও বাবা-মা নিজেরাই অজ্ঞাত কারণে বাসা পরিত্যাগ করে।
বড় কুবোর লোহিত রক্তকণিকায় ম্যালেরিয়ার জীবাণুর সন্ধান পাওয়া গেছে। ম্যালেরিয়ার জীবাণুর একটি প্রকরণ Haemoproteus centropi চাতক (Clamator jacobinus) ও বড় কুবোর মত কোকিলদের নামে নামকরণ করা হয়েছে এবং এ জীবাণু মশার মাধ্যমে ছড়াতে সক্ষম। এছাড়া এসব জীবাণুর পোষকও বড় কুবোর অন্যতম প্রধান খাদ্য।I
Source: Wikipedia